29 C
আবহাওয়া
১১:০৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৩, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » হাসিনার বেডরুমের গোয়েন্দা নথিতে কী ছিল?

হাসিনার বেডরুমের গোয়েন্দা নথিতে কী ছিল?


বিএনএ,ডেস্ক : ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০ আসন পেয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তখন থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগষ্ট দুপুর পর্যন্ত গণভবনে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

YouTube player

পৌনে তিন একর জায়গাজুড়ে নির্মিত গণভবন ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক নির্মাণের পর থেকে শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো প্রধানমন্ত্রী সেখানে বসবাস করেননি।

গত বছরের ৫ আগষ্ট বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে ভারতের উদ্দেশ্যে গণবভন ত্যাগ করার পরপরই সেখান থেকে চলে যায় নিরাপত্তা বাহিনীসহ ভবনটিতে নিয়োজিত সব কর্মকর্তা-কর্মচারি। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার জনতা শেখ হাসিনার ‘অন্দরমহল’ তথা গণভবনে ব্যাপক ভাঙ্গচুর চালায়, লুটে নিয়ে যায় মূল্যবান সব জিনিসপত্র। রক্ষা পায়নি লেকের মাছ, খামারের হাসমুরগীও। এক কথায়, হরিলুট চালিয়েছে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা।

শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের পর বেডরুমে বেশ কিছু গোয়েন্দা নথি পাওয়া গেছে। সর্বশেষ নথিতে ছিল জুলাই আন্দোলন দমনের নানা সুপারিশ।

গণভবনের আক্ষরিক অর্থ ‘জনগণের ভবন’। অথচ এই ভবনে থেকেই তিনি শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়েছিলেন জনবিচ্ছিন্ন। যার ভয়ে এত সুরক্ষাবলয়, সেই বুলেট নয়, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন।

শেখ হাসিনা গণভবনের যে অংশে বসবাস বা অফিস করার জন্য ব্যবহার করতেন, সেগুলোর দেয়াল ছিল বুলেটপ্রুফ। তার শয়ন কক্ষে ‘অতি গোপনীয়’ লেখা নথিগুলোর একটিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নস্যাৎ করার নানান পরিকল্পনা করছিলেন।

তার শয়নকক্ষে পাওয়া একটি গোয়েন্দা সংস্থার নথিতে জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মোকাবিলায় ১১ দফা কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। ওই কর্মপরিকল্পনার নয় নম্বর পয়েন্টে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্র সমন্বয়কারীদের দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশ দেখে এটা স্পষ্ট যে, নথিটি জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের, যখন নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদসহ ছয় সমন্বয়কারী ডিবি হেফাজতে ছিলেন। সার্বিক সংকট মোকাবিলায় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর -ডিজিএফআই এর তৎকালীন মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেনকে সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশও করা হয়।

তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো কোনো মন্ত্রীকে সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশও করা হয় প্রতিবেদনে।

আন্দোলনে অর্থায়নে ব্যবহৃত হুন্ডি নেটওয়ার্ক বন্ধে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে, নির্দেশ দিতেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করা হয়।

নথিতে সরকারকে ‘কঠোর নজরদারি’ জোরদার করা এবং বিভিন্ন পেজ ও প্রোফাইল থেকে ছড়ানো ‘আপত্তিকর’ কনটেন্ট সরিয়ে ফেলা ও ব্লক করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘তারেক জিয়ার নির্দেশে’ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের উত্তরা শাখা আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। তাদের বাড়িঘর ও স্থাপনায় তল্লাশি চালাতে এবং মামলা দিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করার সুপারিশও করা হয়।

ঢাকা মহানগরীর প্রবেশ পথ গুলোতে পুলিশ চেকপোস্ট স্থাপন এবং সব ধরনের প্রবেশ ও বের হওয়ার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় সেই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে পশ্চিমা কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো জাতীয় পার্টির জিএম কাদেরকে বিএনপির আন্দোলনে যোগ দিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছে।

ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা আরেকটি নথিতে ছয়জনের একটি তালিকা রয়েছে, যাদের ‘অর্থদাতা ও উসকানিদাতা’ হিসেবে শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। তালিকায় থাকা দুই ব্যাংক-প্রধান, একজন ব্যবসায়ী ও এক ব্যক্তিকে ‘তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলামের বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মনিরুল তখন পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা বিশেষ শাখা বা এসবির প্রধান ছিলেন।

অতি গোপনীয় ওই নথিতে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ এবং তারকা ক্রিকেটার ও আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানের নামও ছিল। নথিতে এই দুজনের বিরুদ্ধে গোপনীয়তার সঙ্গে আভ্যন্তরীণ তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে।

এক সময় ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো সুরক্ষিত এই গণভবন এখন অরক্ষিত। নেই এসএসএফ সদস্যদের উদ্যত রাইফেল তাক করা সতর্ক পাহারা। সেখানে এখন কয়েকজন আনসারই দেখভালের দায়িত্বে আছেন।

সু সীমানা প্রাচীর ভাঙ্গা, চারিদিকে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। পড়ে আছে, ক্ষোভের আগুনে পোড়া ও ভাঙা বেশ কিছু গাড়ি। অথচ এখানে থেকেছেন গত ১৫ বছর দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা।

শেখ হাসিনার অন্দরমহলে প্রথমেই বড় হলরুম। সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে যারা প্রশংসায় ভরিয়ে দিতেন এবং তার পক্ষের সাংবাদিকরাই কেবল ওই কক্ষে প্রবেশের অনুমতি পেতেন।

গত বছরের ১৪ জুলাই এই হল রুমে সংবাদ সম্মেলনেই তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়েছিলেন। মূলত এইদিন রাতেই সূচনা হয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের প্রতিধ্বনি। সেই হল রুম ও বিভিন্ন দেয়ালে এখন শোভা পাচ্ছে নানা উক্তি গ্রাফিতি।

অন্ধকারাচ্ছন্ন বিশাল এই গণ ভবনের করিডোর গুলো এখন অনেকটা গোলকধাঁধার মতো। সেখানে হাঁটতে গেলেও ঝুঁকি। কারণ সব ঘরজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাঁচের টুকরো। অনেক কক্ষের সিলিংয়ে এখনো ঝুলছে ভাঙা ঝাড়বাতির অংশবিশেষ। কাঁচভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে দিনে সূর্যের আলো ঢোকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

 

বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ