বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জমির উদ্দীন জিসানের সম্প্রতি জামায়াতে যোগদান নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে তিনি কর্ণফুলী জুলধা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে মনোনিত হয়েছেন।
সুত্র জানায়, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম কায়সার এর অনুসারী হিসেবে আজম নাছির উদ্দীন এর পক্ষে মিছিল-মিটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্মসূচি ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন জিসান। শুধু তাই নয়, ৫ আগস্টের আগ মুহুর্ত থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থান প্রতিরোধ করতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ এর পক্ষে তার পরোক্ষ ভুমিকা ছিলো। এই ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তার ছবি ভাইরাল হওয়ায় রাজনৈতিক মহলে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, জুলধা ইউনিয়নের জমির উদ্দীন জিসানের পিতা হাফেজ শফিউল আলম কর্ণফুলী উপজেলা ওলামা লীগের সমর্থক ও চাচাতো ভাই জসিম উদ্দিন কর্ণফুলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। পারিবারিক রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তিনি চট্টগ্রামে মহসিন কলেজে ছাত্রলীগ করতেন ।
সূত্র মতে, ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম কায়সারের নেতৃত্বে জমির উদ্দীন জিসান মিছিল করেন । এছাড়া তাকে ছাত্রলীগের শোক র্যালীসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন তিনি রাতারাতি ভোল পালটিয়ে কর্ণফুলী জুলধা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে মনোনিত হয়েছেন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর ) রাতে কর্ণফুলীর জুলধা ইউনিয়ন জামায়াতের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জিসানের নাম ঘোষণার পর ,ওই এলাকার জামাত-শিবিরের কর্মীরা বিষয়টি সামনে আনেন। এ নিয়ে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জমির উদ্দীন ওরফে জিসানকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় বইছে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিভিন্ন জন তার ছাত্রলীগের আমলনামা সংবলিত ফেসবুকে পোস্টকৃত ছবি শেয়ার করতে থাকে। এতে শুরু হয় মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া। তারা বলেন,“কর্ণফুলীতে আওয়ামী দোসরদের জামায়াতের মতো সুশৃঙ্খল দলে স্থান দেওয়া মানে জুলাই গণহত্যাকারীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্ণফুলী উপজেলার ছাত্রনেতারা মনে করেন, জমির উদ্দীন জিসান হয়তো পারিবারিক নিরাপত্তার জন্য ছাত্রলীগ করতেন। তবে মনেপ্রাণে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্র শিবিরের আদর্শ ধারণ করতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায় থাকার সময় ঝুঁকি এড়াতে তিনি প্রকাশ্যে ছাত্রশিবির করতে পারেননি। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলে গেলে তিনি রাতারাতি ভোল পাল্টিয়ে দেনদরবার করে কর্ণফুলী জামায়াতের ইউনিয়ন কমিটিতে জায়গা করে নেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বদরুল হক এ বিষয়ে বলেন, ‘১৮ ডিসেম্বর কর্ণফুলী জুলধা ইউনিয়নে জামায়াতের কমিটি ঘোষণার কথা ছিলো সত্যি। তবে জিসানের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।’
কর্ণফুলী উপজেলা জামায়াতের আমির মনিরুল আফসার চৌধুরী বলেন, ‘জমির উদ্দীন জিসান চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে ছদ্মবেশে ছাত্রলীগ করতো। কিন্তু পরোক্ষভাবে সে জামায়াত-শিবিরের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলো। ছাত্রলীগ করলেও তার বিরুদ্ধে খারাপ রেকর্ড নেই।’
এ বিষয়ে জমির উদ্দীন জিসানের কোন মতামত জানা সম্ভব হয়নি। কেউ কেউ বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করলেও অনেকে জিসানের অতীত রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। যেহেতু বর্তমানে ছাত্রলীগ একটি নিষিদ্ধ সংগঠন।
বিএনএনিউজ/আরএস/শাম্মী