26 C
আবহাওয়া
৩:২৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মায়ের জানাজায় ছিলেন না এস. আলমসহ ৬ ভাই!

মায়ের জানাজায় ছিলেন না এস. আলমসহ ৬ ভাই!


বিএনএ ডেস্ক : গত ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা অনেকটা গোপনে ভারতে পাড়ি দেন। ক্ষমতাসীন হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। হঠাৎ এই রাজনৈতিক পরিবর্তনেআওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িরা বিপাকে পড়েন। এর মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ এস আলম গ্রুপ অন্যতম। গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ ওরফে এস আলম, তার ৬ ভাই এবং তাদের পরিবারের সব সদস্য সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তারা দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে থেকেই সেখানে বসবাস করছেন। কিন্তু তাদের ‘মা’ চেমন আরা সিঙ্গাপুরে যাননি।

YouTube player

প্রসঙ্গত, এস আলম প্রকাশ মাসুদের ‘মা’ চেমন আরা আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বড় বোন। চেমন আরার সাত পুত্রসন্তানের মধ্যে সবার বড় মোরশেদুল আলম। তিনি ২০২০ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। সন্তানদের মধ্যে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ চতুর্থ। তার বাকি ছেলেরা হলেন রাশেদুল আলম খোরশেদ, শহীদুল আলম, আবদুস সামাদ লাবু, ওসমান গণি ও আবদুল্লাহ আহসান। এছাড়া তিনি পাঁচ মেয়ের জননী।

২০ অক্টোবর ভোরে বার্ধক্যজনিত রোগে ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ৯২ বছর বয়সী চেমন আরা। এই সময় মায়ের পাশে ছিলেন না কোনো সন্তান। ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত এস. আলমের ভাগ্নে ডা. তানভীর আহমেদের মোবাইলে ভিডিওকলের মাধ্যমে মায়ের মুখ দেখেন সাইফুল আলম মাসুদসহ তার অন্য ভাইয়েরা। কানাডা থেকে মাসুদের ভাই আবদুস সামাদ লাবু ভিডিওকলে যুক্ত হন। পরে মাসুদ মায়ের মরদেহ দাফনের বিষয়ে আত্মীয় স্বজনদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ চট্টগ্রামের পটিয়ায় নেওয়া হয়। মরদেহ নিয়ে আসার পর তার মরদেহ পটিয়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এস আলম হাউসের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজার আগে সেখানেও শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখতে ভিডিওকলে যুক্ত হন এস আলম ও তার ভাইয়েরা।

এই দিন আছর নামাজের পর চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাইফুল আলমের মা চেমন আরা বেগমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অন্তত ২০ হাজারের বেশি মানুষের ঢল নামে। পটিয়া পৌরসভার এস আলম জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

সাইফুল আলম মাসুদ বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। তার ভাই আবদুস সামাদ লাবু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার আগেই স্বপরিবারে কানাডায় পালিয়ে যান।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে থেকে সাইফুল আলম মাসুদসহ তার অন্য ভাইয়েরা সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। ৫ই আগস্ট সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপের ব্যাংক খাতে একের পর এক লুটপাটের চিত্র সামনে আসে। এ কারণে দেশে ফেরার সাহস করেননি সাইফুল আলম মাসুদসহ তার অন্য ভাইয়েরা।

গণঅভ্যুত্থানে বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারের প্রশ্রয়ে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ ব্যাংকিং খাতে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এক ব্যক্তিতে পরিণত হন। খোদ ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগসাজশ ও সরকারের বিভিন্ন এজেন্সিকে ব্যবহার করে ব্যাংক দখল, একাধিক ব্যাংকের লাইসেন্স নেওয়া, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণের আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একাধিক উপদেষ্টা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এমনকি প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলমের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের দায় মেটানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর।

গত ২৫ আগস্ট এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ, তার দুই ছেলেসহ বাকী ভাই ও পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্যের ব্যাংক হিসাবের সব ধরনের তথ্য তলব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ)। একই সঙ্গে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে পরিচালিত হিসাব ও অন্যান্য তথ্যও চেয়ে পাঠানো হয়।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ