।।কাইমুল ইসলাম ছোটন।।
বিএনএ, রাঙামাটি: হ্রদ পাহাড়ের জেলা রাঙামাটি। ছুটি পেলেই পর্যটকরা ছুটে আসেন সবুজ পাহাড়ের উপর সাদা মেঘের ভেলা দেখতে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির পর্যটন আইকন হিসেবে পরিচিত ঝুলন্ত সেতু অর্ধ মাসেরও বেশি সময় ধরে পানির নিচে ডুবে আছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর সেতুতে প্রথম পানি উঠে, ১৮ দিন পার হয়ে গেলেও এখনো কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে আছে সিম্বল অব রাঙামাটি খ্যাত পর্যটন ঝুলন্ত সেতু। বর্তমানে সেতুর রেলিং পর্যন্ত পানি উঠে প্রায় পুরোটাই ডুবে গেছে। এতে পানিতে ঝুলছে সেতুটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর প্রবেশ পথ খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। পর্যটকরা যাতে সেতুতে প্রবেশ করতে না পারেন সেজন্য বাঁশ দিয়ে সেতুতে প্রবেশের পথটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সাথে বিপদজনক চিহ্ন হিসেবে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে লাল পতাকা। তবুও কিছু কিছু পর্যটকরা সেতু সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করছেন। কিন্তু সেতুটি পানিতে ডুবে থাকার কারণে হতাশা প্রকাশ করছেন পর্যটকরা।
পর্যটক সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন সেতু ডুবে থাকার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পর্যটক না থাকায় ট্যুারিস্ট বোট চালক থেকে শুরু করে সেতু এলাকায় বসা ভ্রাম্যমাণ পাহাড়ি পণ্যের দোকানদার, সবার মুখেই হাতাশার ছাপ পড়েছে। এটার দ্রুত সমাধান দাবি তাদের।
কক্সবাজার থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক ফাহাদ সুজন বলেন, রাঙামাটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটটি এভাবে পানিতে ডুবে থাকবে এটা আশা করা যায় না। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই সেতুটি দেখতে আসেন, কিন্তু তাদের হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা আরেক পর্যটক হিমেল নন্দী বলেন, আমরা পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। আমরা শুনেছিলাম যে সেতু পানিতে ডুবে গেছে, কিন্তু এখানে এসে দেখতে পাচ্ছি পুরো সেতুই পানির নিচে। এটা দেখে আমরা খুব হতাশ হয়েছি। যা কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত, কারণ এই সেতুই রাঙামাটিকে উপস্থাপন করে। এভাবে সেতু ডুবে যাওয়া রাঙামাটির পর্যটন শিল্পের জন্য ক্ষতিকারক।
ট্যুারিস্ট বোট চালক আবদুল সোবাহান বলেন, এই বর্ষা মৌসুমটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়ে ঝর্ণা, লেক দেখার জন্য রাঙামাটিতে পর্যটকরা আসেন। কিন্তু এবারের বর্ষা আমাদের জন্য হতাশার। ব্রীজ ডুবে যাওয়ার খবর সারাদেশে প্রচার হয়ে যাওয়ায় পর্যটক নেই বললেই চলে। আমরা সম্পূর্ণ অলস সময় পার করছি। এভাবে চলতে থাকলে কয়েকদিন পর আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
সেতু এলাকায় হাতে বোনা ব্যাগ ও পাহাড়ি ফলমূল বিক্রি করেন কণিকা চাকমা। তিনি বলেন, ব্রীজ ডুবে যাওয়ার পর থেকে একটা দিনও ভালো বিক্রি হয়নি। কোনদিন তো এক টাকাও বিক্রি হয়নি। কারণ এখন পর্যটক আসে না। কবে পানি কমবে আর পর্যটক আসবে আমি এখন সেই দিন গুনছি।
রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার মোঃ রমজান আলী বলেন, আজ ১৮ দিন হলো ব্রীজ পানির নিচে। প্রথমদিকে যেই পরিমাণ পানি ছিলো আমরা আশা করেছিলাম কিছুদিনের মধ্যে পানি কমে যাবে। কিন্তু টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানি আরো বেড়ে এখন ব্রীজ একেবারে ডুবে গেছে। প্রথমদিকে কিছু পর্যটক আসলেও এখন আর পর্যটক আসেনা।
এ বিষয়ে রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, এই সেতু ডুবে থাকার ফলে বর্তমানে দৈনিক আমাদের ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। সেতু সংস্কার বা উপরে উঠানোর ব্যাপারে আমি উপরস্থ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এখন উনারা বিষয়টি দেখভাল করবেন।
বিএনএ/এমএফ