মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাঙালির মুক্তির ইতিহাসে ক্ষণজন্মা অগ্নিপুরুষ শহীদ মুরিদুল আলম-এর ৫১তম শাহাদত বার্ষিকী আজ বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর)।
শহীদ মুরিদ ছিলেন চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বাষট্টির ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস এবং জেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যাণ সম্পাদক। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এই সহচর।
৭১-এর ২০ সেপ্টেম্বর বাড়িতে অসুস্থ মা-বাবা, দেড় বছর বয়সী শিশুসন্তান ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রেখে গভীর রাতে নৌকাযোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালিস্থ রাজাখালির উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলেন সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ মীমাংসা করার লক্ষ্যে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাঁর সহযোদ্ধাদের মধ্যে কিছু গাদ্দার ছিল যারা আগে থেকেই তাঁর নেতৃত্বগুণে ঈর্ষান্বিত ছিল। কিন্তু সরলপ্রাণ মুরিদ ওইসব গাদ্দারদের চিনতে ভুল করেছিলেন। আর ওইসব গাদ্দারেরাই তাঁকে ভোরের সূর্য ওঠার আগে আগে গন্তব্যে পৌঁছার প্রলোভন দেখিয়ে রাজাকার নিয়ন্ত্রণাধীন পুঁইছড়ি এলাকার জলকদর ঘাটে নৌকা ভেড়াতে বাধ্য করে। নৌকা থেকে নেমে অল্পদূর যেতেই পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কুচক্রীরা মুরিদকে ঘোর বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেরা নিরাপদে সটকে পড়ে। সেদিন মুরিদকে ছেড়ে যাননি কেবল একজনই। তিনি হলেন, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন নাট্য-সম্পাদক ফরিদুল আলম।
অতঃপর কুখ্যাত আহমেদ শফির নেতৃত্বাধীন রাজাকারেরা মুরিদ ও ফরিদকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন মুরিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফরিদুল আলম। পরে রাজাকাররা মুরিদুলকে ধরে ফেলে এবং তাঁকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে খালে ফেলে দেয়। খালের পানিতে কিছুদূর ভেসে যাওয়ার পর কৃষকরা তাকে উদ্ধার করে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয় এবং কৃষকরা খালের পাড়েই তাঁকে কবর দিয়ে দেয়। যুদ্ধের পর এই বীর শহীদের হাড়গোড় উদ্ধার করে গ্রামের বাড়ি চন্দনাইশের কেশুয়া গ্রামে নিয়ে এসে সমাধিস্থ করা হয়। হাড়গোড়ের সঙ্গে সেদিন তাঁর ব্যবহৃত হাতঘড়ি ও চশমাটিও পাওয়া যায়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহীদ মুরিদুল আলম-এর ৫১তম শাহাদত বার্ষিকীতে তার পরিবারের পক্ষ হতে স্থানীয়ভাবে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বিএনএনিউজ২৪,জিএন