24 C
আবহাওয়া
১২:১১ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কি ছিল সেই আলজাজিরার প্রতিবেদনে?

কি ছিল সেই আলজাজিরার প্রতিবেদনে?

কি ছিল সেই আলজাজিরার প্রতিবেদনে?

।। শামীমা চৌধুরী শাম্মি ।।

বিএনএ, ঢাকা: বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার ঘনিষ্ঠ স্বজনদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এই নিষেধাজ্ঞা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সোমবার এ কথা ঘোষণা করেছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, তার কর্মকান্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর জনসাধারণের আস্থা কমেছে। এই ‘ডেসিগনেশন’ বা নিষেধাজ্ঞার ফলে, আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের অযোগ্য হবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে বাংলাদেশের সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদকে, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পররাষ্ট্র দপ্তর। এর ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হবেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশে আইনের শাসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা জোরদার করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার আবারো ব্যক্ত করেছে।

এতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকারি পরিষেবা আরো স্বচ্ছ, ব্যবসায়িক ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নয়ন এবং অর্থ পাচারসহ আর্থিক অপরাধ তদন্ত আর তার বিচারের মাধ্যমে দুর্নীতি-বিরোধী কার্যক্রম সমর্থন করে।’

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কাতার-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা তৎকালীন সেনা প্রধান আজিজ আহমেদকে নিয়ে এক ঘন্টার একটি অনুসন্ধানী প্রামাণ্য চিত্র প্রচার করে। ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ নামের এই প্রতিবেদনটিতে সে সময়কার সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদের অতীত এবং বর্তমান বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয় এবং নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়।

এতে বলা হয়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের আপন তিন ভাই ২০০৪ সালে একটি হত্যাকাণ্ডের অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হয়েছিল। এই ভাইদের মধ্যে আনিস আহমেদ এবং হারিস আহমেদ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

তৃতীয় ভাই, তোফায়েল আহমেদ জোসেফ, যিনি হত্যার অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নিয়ে কারাগার থেকে মুক্ত হন।

যদিও দুই ভাই হারিস আহমেদ এবং আনিস আহমেদ পলাতক, কিন্তু আল জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে হারিস আহমেদ এবং আনিস আহমেদকে জেনারেল আজিজ আহমেদের ছেলের বিয়েতে বাংলাদেশে দেখা গেছে। প্রতিবেদনে দেখানো হয় আনিস আহমেদ থাকেন কুয়ালালামপুরে আর হারিস আহমেদ আছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গোপন রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে বুদাপেস্ট-এ হারিস আহমেদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। তিনি নাম পরিবর্তন করে হাসান মোহাম্মদ নাম নিয়ে বিভিন্ন দেশে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন সেটা দেখানো হয়েছে।

বুদাপেস্টে একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সাথে এক কথোপকথনে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য বুলেট সরবরাহের কথা বলতে দেখা যায়।

আল জাজিরার ঐ প্রতিবেদনে হারিস আহমেদকে বলতে শোনা গেছে পুলিশের চাকরি, যেমন থানার ওসির পদ, পেতে কত টাকা নেওয়া হয়। তিনি সেখানে বলেছেন, এক্ষেত্রে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। এই কাজে সরকারের শীর্ষ স্থানের লোক জড়িত থাকেন বলে হারিস আহমেদ উল্লেখ করেন।

আল জাজিরার এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে কঠোরভাবে নিন্দা জানানো হয়েছে এই প্রতিবেদনের।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে: “এটা পরিষ্কার না যাদের পূর্বে অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার রেকর্ড রয়েছে তাদের সঙ্গে কীভাবে আল জাজিরার মত আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেল যুক্ত হল। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে, বিভিন্ন অফিসিয়াল, সামাজিক, ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের ক্লিপ ব্যবহার করে। বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন অনুষ্ঠানের দৃশ্য একত্রিত করে সম্পাদনা করে কণ্ঠ দেওয়া হয়েছে।” বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিবেদনটিকে মিথ্যা ও অবমাননাকর হিসেবে বর্ণনা করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে, একে লন্ডন ও অন্যান্য জায়গায় সক্রিয় উগ্রপন্থী ও তাদের সহযোগীদের উসকানিতে বেপরোয়া ও নোংরা অপপ্রচার বলে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার এটি প্রত্যাখ্যান করছে। আরও বলা হয়, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে জামায়াতে ইসলামীর মদদ-পুষ্ট কতিপয় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক অপরাধী এবং কুখ্যাত ব্যক্তি তাদের চিরাচরিত ছকে যে ধরনের বাংলাদেশ-বিরোধী অপপ্রচার চালায়, এই রিপোর্টটিও সেই শ্রেণির। এরা বিভিন্ন উগ্রপন্থী আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ও সংবাদমাধ্যম, বিশেষ করে আল জাজিরার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আল জাজিরার প্রতিবেদনের অভিযোগগুলোর মূল সূত্র একজন সন্দেহভাজন আন্তর্জাতিক অপরাধী, যাকে আল জাজিরা নিজেই ‘সাইকোপ্যাথ’ আখ্যা দিয়েছে।

‘প্রধানমন্ত্রী বা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওই বিশেষ ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার সামান্যতম প্রমাণও নেই। আর মানসিক ভারসাম্যহীন কারও কথার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো একটি আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেলের জন্য চরম দায়িত্ব-হীনতা” বলে ওই প্রতিবাদ বিবৃতিতে বলা হয়।

বিএনএনিউজ/ বিএম/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ