25 C
আবহাওয়া
১:০৩ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-৯

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-৯

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-৩৪

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় উগ্রবাদী সেনা সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে।হত্যাকারিরা ক্ষমতাসীন হয়ে ওই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর ‘ ইনডেমনিটি ‘ অডিন্যান্স জারি করে। যা পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে সেটিকে আইনে পরিণত করেন। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে  ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ।

বাতিল করে ‘ইনডেমনিটি অ্যাক্ট’। এরপর ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা জেলা দায়রা জজ আদালত ১৮ আসামির মধ্যে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। আসামিরা আপিল করেন। ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টে বিভক্ত রায় প্রকাশ হয়। পরে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।

কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা মামলার বিচার হয়েছিল তা নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে অজানা! বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি(বিএনএ) বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।

আজ প্রকাশিত হল পর্ব-৯
(২) আসামী লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের নিকট আদালতের প্রশ্নের জবাবসহ তাহার বিবৃতি :
আদালতের প্রশ্নের উত্তর :

(১) আপনি কখন সেনাবাহিনীর চাকুরী হইতে পদত্যাগ করেন?
উত্তর: ১৯৭৪ সালের শেষভাগে আমাকে রিলিজ করা হয়।

(২) কোন ক্ষোভের কারণে পদত্যাগ করেন কি?
উত্তর: হ্যা, তৎকালীন সেনাপ্রধান ও সি.জি.এস. এর উপর ক্ষোভের কারণে পদত্যাগ করি।

(৩) পুনরায় চাকুরীতে যোগদানের জন্য কখন আপনাকে আহবান জানানো হয়?
উত্তর: ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট তারিখে সি.জি.এস. ব্রি. খালেদ মোশারফ আমাকে চাকুরীতে যোগদানের জন্য পুনরায় আহবান জানান। এই খবরটি আমাকে মেজর ডালিম, মেজর নুর চৌধুরী, মেজর আজিজ পাশা ও ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা দেয়। আমি ১৫ আগস্ট ১২টায় যোগদান করি।

লিখিত বিবৃতি:
আমি লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান(অব.) একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় দেশ মাতৃকার রক্ষার মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারত আসি এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। আমি মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টরের ১নং সাবসেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম।

গত ১৯৯৬ সালের ১৩ই আগস্ট তারিখে আমাকে আমার বাসভবন থেকে কোন প্রকার কারণ দর্শানো ছাড়া গ্রেফ্তার করা হয় এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকাদেশ দিয়ে আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে এই অবৈধ আটকাদেশের বিরুদ্ধে আমার স্ত্রী মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন। মহামান্য হাইকোর্ট আমার আটকাদেশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন।

আমাকে বর্তমান মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ৩-১০-৯৬ইং তারিখে। এর পূর্বে আমাকে লালবাগ থানা মামলা নং- ১১(১১)৭৫ এতে ৯-৯-৯৬ইং তারিখে গ্রেফতার দেখানো হয় এবং দফায় দফায় একনাগাড়ে ১৫ দিন আই.ও. আবদুল কাহার আকন্দ আমাকে রিমান্ডে নিয়ে রাখেন এবং বিভিন্নভাবে আমার উপর নির্যাতন চালানো হয়। আমি নির্যাতনে ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে জেল হাজতে প্ররণ করা হয়। পুনরায় দুই দফায় জেল হাজত থেকে আমাকে আই.ও. আব্দুল কাহার আকন্দ রিমাণ্ডে নিয়ে একনাগাড়ে ১২ দিন তার হেফাজতে সি.আই.ডি অফিসে রাখেন। পুনরায় এখানে পূর্ববৎ আমার উপর চরমভাবে নির্যাতন চালানো হয়। আমি ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং আই.ও. সাহেবের কথামত জবানবন্দী দেবার জন্য আমার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয় এবং দীর্ঘ ২৭ দিনের রিমান্ড শেষে আমাকে প্রথমবারের মত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফজালুর রহমান বরাবরে হাজির করা হয়। তখন আমার হাত বাঁধা অবস্থায় ছিল।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল কাহার উপস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেট আফজালুর রহমান তাদের মনমত কিছু বক্তব্য যা আমার বক্তব্য নয় সেগুলো কাগজে লেখেন এবং আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেন। তখনও আমার হাত বাঁধা অবস্থায় ছিল। আমি হাত খুলে দিতে বলি। সাময়িকভাবে আমার হাত খুলে দেয়া হয়। রিমান্ডে থাকাকালীন সময়ে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের ফলে আমি মারাত্মক রকমের দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম যার ফলে তদন্তকারী কর্মকর্তা চাপ প্রয়োগে আমাকে উক্ত কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। এ সময় আমাকে কাগজে লেখা বিবৃতিটি পড়তে পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

আমি তখনও জানতাম না যে ওটা ছিল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী। আমি হাত বাঁধা অবস্থায় জোহরের নামাজ আদায় করি। ম্যাজিস্ট্রেট আফজালুর রহমানকে নামাজ পড়বার জন্য হাত খুলে দিতে বলা সত্ত্বেও আমার হাত খুলে দেয়া হয়নি। অমানবিকভাবে অতিকষ্টে আমি হাত বাঁধা অবস্থাতেই জোহরের নামাজ আদায় করি।

তথ্যসুত্র: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায়, গ্রন্থনা ও সম্পাদনা- রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী(চলবে)

আরও পড়ুন :
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-৮
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-৭
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-পর্ব-৬
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-৫ম পর্ব

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-৪র্থ পর্ব

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়-৩য় পর্ব

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পুর্ণাঙ্গ রায়-২য় পর্ব
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পুর্ণাঙ্গ রায়-প্রথম পর্ব

গ্রন্থনা: ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনায়: এইচ চৌধুরী

Loading


শিরোনাম বিএনএ