বিএনএ, ডেস্ক : রাজনীতি আর আকাশের চেহারা অনেকটা একই। সকাল-দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যা-রাতের ভিন্নভিন্ন রূপ। সেই জন্য রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছুই নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে। নেতারা সকালে বলেন এক কথা। দুপুরে বলেন অন্য কথা। আবার সন্ধ্যা কিংবা রাত হতেই বদলে যায় তাদের সিদ্ধান্ত। শুধু একবার নয়। একাধিকবার এমনটা হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন এলেই এমন সিদ্ধান্ত বদলের ঘটনা ঘটে।

রাজনৈতিক পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘আনপ্রেডিক্টেবলিটি’। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সবচেয়ে বেশি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ জাতীয় পার্টি। কিন্তু ২৪ জুলাই পরবর্তী আন্দোলনে জামায়াত ইসলামীও ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হয়ে উঠেছে নানা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে নিয়ে একেক সময় একেক মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান।
গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। গুলশানে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাঁর কমিটমেন্টে তিনি ঠিক আছেন কি না, আমরা সেটা দেখতে চাই।’
জামায়াত আমির আগামী রমজানের আগে নির্বাচন দাবি করে বলেন, এরপরে নির্বাচনের পরিবেশ থাকবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দেয়ার মারপ্যাঁচে থাকা জামায়াত আমিরের এমন বক্তব্যে অনেকেই মনে করেছিল বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন ইস্যূতে একই পথে হাতধরাধরি করে হাঁটছেন।
কিন্তু ৭২ ঘন্টা না যেতেই বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান মত পাল্টে ফেলেছেন। অর্থাৎ ১৮০ ডিগ্রিতে ইউর্টান নিয়েছে জামায়াত ইসলামী।
১৯ এপ্রিল দুপুরে লালমনিরহাট জেলা কালেক্টরেট মাঠে জেলা জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘যেকোনো নির্বাচনের আগে অবশ্যই দুটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একটি হচ্ছে, খুনিদের বিচার, এ বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। আরেকটি হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার। এই দুইটা ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জামায়াত ইসলামী নির্বাচন নিয়ে ৭২ ঘন্টার মধ্যে ১৮০ ডিগ্রীতে পল্টি নেয়ার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে দলটির নিবন্ধন ফিরে না পাওয়া, বিএনপি’র ক্ষমতায় যাওয়াকে দীর্ঘায়িত করে সারাদেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা। ইসলামী দলগুলোকে একই মঞ্চে এনে জোট করে গণজাগরণ তৈরি করা, এক কথায় ভোটের মাঠে লড়াই করার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে চায় জামায়াত।
প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির এমন সুবর্ণ সুযোগ আগে কখনো পায়নি জামায়াত ইসলামী। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চায় দেশের আলোচিত সমালোচিত ধর্মভিত্তিক অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব/শাম্মী