34 C
আবহাওয়া
১০:৩৬ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ৩০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অপেক্ষায় বোয়ালখালীর প্রথম শহীদ মিনার

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অপেক্ষায় বোয়ালখালীর প্রথম শহীদ মিনার


।। বাবর মুনাফ ।।

বিএনএ, চট্টগ্রাম: স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ প্রতি বছর অমর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসে মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার ছাত্রসমাজ আত্মদান করে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। রক্তরাঙা অমর একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তের প্লাবনের মধ্য দিয়ে আজ সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবময় আসনে আসীন। একুশে ফেব্রুয়ারি এদেশের মানুষকে শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মন্ত্র, বাঙালিকে করেছে মহীয়ান। জাতি হিসেবে আমরা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার সমন্বয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেছি। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে মহত্তর স্বাধীনতার চেতনা। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লিখেছেন, “আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার।”

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর দেশের অন্যান্য স্থানের মত এক অনন্য প্রচেষ্টার ফসল চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। ভাষা আন্দোলনের পর প্রথম পর্যায়ে পিরামিডের মতো দেখতে শহিদ মিনারটি র্নিমিত হয়। এটি প্রথম শহীদ মিনার যা এখনও দেশে পরিচিতি লাভ করেনি। ১৯৬৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শহীদদের সম্মানে বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী হারিকেনের আলোয় গাছের গুঁড়ি, ইট, পাথর, সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করে এ শহীদ মিনার। এ বিদ্যালয়ে নির্মিত শহীদ মিনারটি বাংলাদেশে স্কুলপর্যায়ে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

তথ্যমতে, সারাদেশে তখন চলছিল সামরিক জান্তা আইয়ুব খানের স্বৈরশাসন। তার মধ্যেই কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এ শহীদ মিনারটি তৈরি করেন। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন শিক্ষক কাজী আবদুল গণি ছাবেরী। এই শহীদ মিনার নির্মাণের নেপথ্য উদ্যোক্তা ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সৈয়দ জালাল উদ্দীন। তার সঙ্গে আরও ছিলেন বোয়ালখালী থানা ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও জাসদ নেতা মো. সৈয়দুল আলম, সাংস্কৃতিক সংগঠক মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। শুধু শহীদ মিনার নির্মাণের অপরাধে তৎকালীন বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছিল। সৈয়দুল আলম, নূরুল হুদা ও সৈয়দ আবুল হাসানকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল।

শহীদ মিনারটি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানি সৈন্যরা। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। মহান একুশে সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত এম.এ বার্ণিক’র লেখা ‘জেলায় জেলায় শহীদ মিনার’ গ্রন্থে ৮৯৭ পৃষ্ঠায় দেশের স্কুলপর্যায়ে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার বোয়ালখালীর কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে বিষয়টি লিপিবদ্ধ আছে।

কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি দেশের স্কুল পর্যায়ের প্রথম শহীদ মিনার। তখনও দেশের অন্য কোনো স্কুলে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়নি। এটি দেখতে ও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দূর-দূরান্ত থেকে স্কুলে ছুটে আসেন ভাষা অনুরাগীরা। আমরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি করে ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমির কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এখনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া যায়নি। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে এটাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেবে এমনটি প্রত্যাশা করে বোয়ালখালীবাসী।

বিএনএনিউজ/ ওজি/ এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ