বিএনএ, ঝিনাইদহ: ১৯৪৮ সালে কিছুটা এবং ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পরিপূর্ণ ঢেউ লাগে ঝিনাইদহ জেলায়। উত্তাল হয় ঝিনাইদহ! ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলন। সেই ভাষা সংগ্রামে পিছিয়ে ছিল না ঝিনাইদহ।
ঝিনাইদহের ছাত্রসমাজ, সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধারাবাহিকভাবে একসাথে ঝিনাইদহে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। মহান ভাষা আন্দোলনে ঝিনাইদহের যেসব ভাষা সৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহাও অন্যতম। ৮৮ বছরেও তিনি এখনো অবিচল। দুঃখ একটাই কেউ খোঁজ রাখে না তার।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাষা সৈনিকদের সম্মান দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। সরেজমিনে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহার বয়স এখন ৮৮। কারো কোনো সহযোগিতা ছাড়াই একাই চলতে হচ্ছে তার। ৮ বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর একা একাই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ঝিনাইদহ শহরের পার্ক পাড়ায়। ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহার ৫ মেয়ে ও ২ ছেলে। সবাই যে যার মতো বিভিন্ন এলাকায় থাকায় এখন একেবারেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। এক বাড়িতে একাই থাকেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার দুঃখ কেউই তার খোঁজ রাখে না।
ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহা বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি শহরের ছবিঘর সিনেমা হলের পাশে গোপনে পোস্টার লিখছিলেন। এক পুলিশ টের পেয়ে পা দিয়ে পোস্টারগুলো মাড়িয়ে দেয়। পুলিশকে ঘুষি মেরে পালিয়ে যান তিনি। এ জন্য তাকে অনেক দিন পালিয়ে থাকতে হয়েছিল। জাতীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি না পেলেও তার কোনো ক্ষোভ নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার একটি হাতের পাতায় গুলিও লাগে। কিন্তু তিনি কখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও পাননি। সরকারের পক্ষ থেকে কেউই তার খোঁজ নেন না।
স্থানীয়রা জানান, আসলেই কষ্টে আছেন তিনি। একাকীত্ব তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানান, ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহার আগামীর দিনগুলো যে ভালোভাবে কাটে আমরা সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমি সম্প্রতি সরেজমিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা করে এসেছি। কয়েকদিন আগে তাঁর জন্য একটা বয়স্ক ভাতার কার্ডও করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করা তাঁকে।
বিএনএ/আতিক, এমএফ