বিএনএ,ময়মনসিংহ:ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ধান ক্ষেত থেকে গলায় জ্যাকেটের ফিতা পেঁচানো শামীম হকের (১৬) মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত মো. রাকিবুল ইসলাম (২৩) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।
রোববার (২১ জানুয়ারী) বিকালে জেলা গোয়েন্দা শাখার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সব জানানো হয়।
ভিক্টিম নিহত শামীম হক ও আসামী রাকিবুল ইসলাম দু’জন মিলে অটোরিকশা ভাড়ায় নিয়ে ১০ হাজার বিক্রি করে। অটোরিকশা বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে রাকিবুল ইসলাম জ্যাকেটের ফিতা খুলে শামীম হকের গলায় পেঁচিয়ে হত্যা করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত শামীম হক উপজেলার তারাটি চরপাড়া গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে। সে একই গ্রামের একটি দাখিল মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেনীতে লেখাপড়া করত। গ্রেফতারকৃত মো. রাকিবুল ইসলাম উপজেলার তারাটি গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে।
এর আগে শনিবার (২০ জানুয়ারী) সাড়ে ১২ টার দিকে উপজেলায় বিরাশি গ্রামের একটি ধান ক্ষেত থেকে শামীম হকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উপজেলার তারাটি চরপাড়া গ্রামের সিরাজ আলীর ছেলে শামীম হক। সে একই এলাকার শামছুল হুদা দাখিল মাদ্রাসায় ৮ম শ্রেনীতে লেখাপড়া করত। তার বাবা একজন দিনমজুর। সংসার চালাতে তার বাবার হিমশিম খেতে হত। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি শামীম হক ভাড়ায় অটোরিকশা চালাত । এই টাকা দিয়ে তার লেখাপড়ার খরচ ও বাবার সংসারে সহযোগিতা করত। শুক্রবার মাদ্রাসা বন্ধের দিন, তাই সকাল সকাল অটোরিকশা নিয়ে বের হয় সে। বিকালে বাবাকে ফোনে জানায়, সে তার বোনের বাড়ি জেলার সদর উপজেলার কুষ্টিয়া গ্রামে যাবে । তবে রাতেই বাড়িতে ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু রাতে বাড়িতে ফিরেনি। সকালের দিকে বিরাশি গ্রামের নিলার বাজার সংলগ্ন একটি ধান ক্ষেতে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
এই ঘটনায় নিহত শামীম হকের বাবা সিরাজুল আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মুক্তাগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর রাতেই অভিযান চালিয়ে রাকিবুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, আসামি মো. রাকিবুল ইসলাম পেশায় একজন ভ্যানচালক। সম্প্রতি তার কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। গত প্রায় দুই মাস আগে সে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লোন নেয়। আড়াই লাখ টাকার কিস্তি ৩ হাজার টাকা। গত ১৮ জানুয়ারী কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ভিক্টিম শামীমের সাথে ভাড়া নেওয়া অটো গাড়িটি বিক্রি করবে বলে পরামর্শ করে। এতে শামীম রাজি হয়ে যায়।
সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ১৯ জানুয়ারী মুক্তাগাছা থানা এলাকার ফকিরগঞ্জ বাজার থেকে আসামী এবং ভিকটিম ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা নিয়ে অনেকক্ষণ বিভিন্ন জায়গায় যত্রতত্র ঘোরাঘুরি করে। এক সময় জামালপুর জেলার সদর থানাধীন নরুন্দি বাজারে যায়। সেখানে গিয়ে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।
অটোরিকশা বিক্রির টাকা হাতে নিয়ে আসামী রাকিবুলকে ২ হাজার টাকা দেয়। এতে রাকিবুল হক ক্ষিপ্ত হয়ে শামীমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে সে ভিকটিম শামীমকে কৌশলে ডেকে নিয়ে উপজেলার বিরাশি গ্রামের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭ টার দিকে ভিকটিম শামীমের পরিহিত জ্যাকেটের ফিতা টান দিয়ে খুলে তার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং সেখানে ফেলে রেখে চলে যায়। আসামী রাকিবুল ইসলামকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
বিএনএ/ হামিমুর রহমান, ওজি/এইচমুন্নী