ইসলামাবাদ, ২০ অক্টোবর :
ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহিদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘শেখ রাসেল দিবস’ যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনা ও মর্যাদার সাথে উদ্যাপন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে চ্যান্সারি ভবনে শহিদ শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, শিশু-কিশোরদের প্রধানমন্ত্রীর লিখিত ‘আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা’ থেকে পাঠ,আলোচনা, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, কেক কাটা, ভিডিওচিত্র প্রদর্শন ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষ্যে দূতালয় প্রাঙ্গণ বর্ণাঢ্য ব্যানার, পোস্টারও রঙীন বেলুনে সুসজ্জিত করা হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ ও তাদের পরিবারবর্গ এতে অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পাকিস্তানে নিযুক্ত হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী সকল শিশু-কিশোরদের নিয়ে শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা পর্ব শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী তাঁর স্বাগত বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহিদ শেখ রাসেলের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ ও ‘স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী’ উদ্যাপনকালে শেখ রাসেলের জন্মবার্ষিকী ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের সরকারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োচিত একটি উদ্যোগ। তিনি বলেন, প্রতিবছর ‘শেখ রাসেল দিবস’ পালনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ও বিশ্ববাসী শেখ রাসেলের জীবন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুকে জীবনের একটি দীর্ঘসময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে বিধায় শিশু রাসেল পিতার সান্নিধ্য ও আদর-যত্ন থেকে বঞ্চিত ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালে শেখ রাসেল তাঁর মা, দুই বোন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ধানমন্ডির একটি বাড়িতে বন্দি জীবন কাটিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি এবং বড় দুইভাই শহিদ শেখ কামাল ও শহিদ শেখ জামাল ছিলেন রণাঙ্গনে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর শেখ রাসেল, মা, বোন এবং পরিবারের সদস্যসহ ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর বন্দিদশা হতে মুক্ত হন।
হাইকমিশনার বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে পিতা, মাতা, দুইভাই ও আত্মীয় পরিজনসহ দশ বছরের ছোট্ট রাসেলকে ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মম হত্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তথা রক্তের উত্তরাধিকারীদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী। কিন্তু কালের পরিক্রমায় শহিদ শেখ রাসেল আজও বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক মানবিক সত্ত্বা হিসেবে বেঁচে আছে। দেশের শিশু-কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের কাছে শেখ রাসেল এক ভালোবাসার নাম। শহিদ শেখ রাসেলসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
হাইকমিশনারের স্বাগত বক্তব্যের পর শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচিত ‘আমাদের ছোট্ট রাসেল সোনা’ থেকে পাঠচক্র ও শেখ রাসেলের জীবনীভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ পাঠচক্রে বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় ছয়জন শিশু অংশগ্রহণ করে এবং তিনজন কিশোর বাংলা, ইংরেজি ও উর্দুতে শেখ রাসেলের জীবনীর ওপর আলোচনা করে। পরে শহিদ শেখ রাসেলের জীবনীভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষ্যে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ইভেন্টে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।