20 C
আবহাওয়া
১:৩৯ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৩০ (সিলেট-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৩০ (সিলেট-২)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সিলেট-২ আসনের হালচাল।

সিলেট-২ আসন

সিলেট-২ সংসদীয় আসনটি ওসমানী নগর ও বিশ্বনাথ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৩০ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির মাকসুদ ইবনে আজিজ লামা বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৬ শত ২৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৭ হাজার ২ শত ৬৫ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মাকসুদ ইবনে আজিজ লামা বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বাকশালের লুৎফর রহমান। তিনি পান ২২ হাজার ৮৭ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম ইলিয়াছ আলীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির এম ইলিয়াছ আলী কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শাহ আজিজুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২ হাজার ৪ শত ১১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৪ শত ৯৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শাহ আজিজুর রহমান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ২ শত ৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির মাকসুদ ইবনে আজিজ লামা । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৪৪ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এম ইলিয়াছ আলী বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯০ হাজার ৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির ইলিয়াছ আলী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৪ শত ৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শাহ আজিজুর রহমান । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ২ শত ৯১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮ শত ৩৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৭ হাজার ৯ শত ৯০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ২ শত ৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইলিয়াছ আলী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫ হাজার ১ শত ৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির মো. ইয়াহইয়া চৌধুরী বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৭ হাজার ৩ শত ৩৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৬১ হাজার ৯ শত ৫ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মো. ইয়াহইয়া চৌধুরী বিজয়ী হন । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ২ শত ৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহিবুর রহমান। আনারস প্রতীকে তিনি পান ১৫ হাজার ২৯ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: গণফোরামের মোকাব্বির খান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৫ শত ৮৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮ শত ৭৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মো. ইয়াহইয়া চৌধুরী, উদীয়মান সূর্য গণফোরামের মোকাব্বির খান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির উদ্দীন, আম প্রতীকে ন্যশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির মনোয়ার হোসাইন, টেলিভিশন প্রতীকে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ এর মোশাহিদ খান এবং দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে গণফোরামের মোকাব্বির খান বিজয়ী হন । উদীয়মান সূর্য প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৪ শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির মোঃ ইয়াহইয়া চৌধুরী । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ৩২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম ও দশম সংসদে জাতীয় পার্টি, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি , সপ্তম ও নবম সংসদে আওয়ামী লীগ এবং একাদশ সংসদে গনফোরামের প্রার্থী বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সিলেট-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিলেট-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৩৯.২৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২.৭১%, বিএনপি ৮.৭৩%, জাতীয় পাটি ৪০.১১%, জামায়াত ইসলামী ৪.৬৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৩.৭৮% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৪.৯৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩২.১৪%, বিএনপি ২৯.২৬% জাতীয় পাটি ২৯.৬৯%, জামায়াত ইসলামী ৪.৮৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.০৬% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.১৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯.১০%, ৪ দলীয় জোট ৫৪.৪৫%, জাতীয় পাটি ১৪.৬৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৭৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.২৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫০.১৭%, ৪ দলীয় জোট ৪৮.৬৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.১৮% ভোট পায়।

সিলেট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খান।তিনি একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যজোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জয়ী হন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কোন জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। ইতোমধ্যে সংসদ থেকে পদত্যাগসহ নানা বিষয়ে তার সঙ্গে বিএনপির’র মত বিরোধ রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন গুঞ্জনও আছে।

আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী মহাজোট থেকে আবারও মনোনয়ন চাইবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অরূপরতন চৌধুরী।

বিএনপি থেকে এই আসনে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর (লুনা) ও তাঁর ছেলে আবরার ইলিয়াস এই দুইজনের মধ্যে একজন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। আসনটিতে একসময় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান ছিল। কিন্তু বিগত দুইটি নির্বাচনে মহাজোটকে ছেড়ে দেয়া হয় আসনটি। ফলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা একধরনের হতাশ ও নিষ্ক্রিয়। ভোটাররাও বিভক্ত হয়ে গেছেন। জনপ্রিয় নেতা সংকট রয়েছে। যারা আছেন তারা এলাকামুখী নন, তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সাংগঠনিক কার্যক্রমে পিছিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা বেশ মজবুত। তবে ১০ বছর ধরে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ থাকলেও বিএনপির দলীয় অবস্থান ধরে রেখেছে তার স্ত্রী ও পুত্র। তাদের বেড়েছে সমর্থন। এলাকার সাধারণ ভোটারগণ ইলিয়াস আলী ও তার পরিবারের প্রতি সহানুভুতিশীল। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থায় ভাটার টান পড়েছে। গণফোরামের মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য হওয়ার পর গত গত ৫ বছরে এলাকায় কাঙ্ক্ষিত কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি বলে অভিমত ভোটারদের। আসনটিতে ভোটের হিসাব জটিল। বিভক্ত সমর্থক ও ভোটারদের এক করে জয় নিশ্চিত করা বেশ কঠিন
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৩০তম সংসদীয় আসন (সিলেট-২) আসনটিতে জয়-পরাজয় নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জাতীয় রাজনীতির জোটের সমীকরণের ওপর।

আরো পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৯ (সিলেট-১)

বিএনএ/শাম্মী, রেহানা, এমএফ,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ