বিএনএ চট্টগ্রাম: স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা প্রায় সপ্তাহখানেক ডুবে ছিল। ৩ আগস্ট থেকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট এই বন্যার পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। শুধু প্রাণ কেড়ে নিয়ে থামেনি বন্যা। কেড়ে নিয়েছে কৃষকের বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকুও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধীনে থাকা চার জেলাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৯৭ জন কৃষক। আর ক্ষতির পরিমাণটাও কম নয়- ৩১১ কোটি টাকার বেশি। বন্যার পর ক্ষতির এই তালিকা তৈরি করেছে অধিদপ্তর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধীনে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত এই চার জেলা হলো চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর। এসব জেলার কৃষকরা আউশ ধান, রোপা আমন ধান, আমন বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন ও শরৎকালীন সবজি চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার জেলায় সব মিলিয়ে ৫০ হাজার ৪০৪ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ১ লাখ ১২ হাজার ২৮৭ মেট্রিক টন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের ৩০ হাজার ২৬৬ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ১৮৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
কক্সবাজার জেলায় ১৫ হাজার ৭৭৮ হেক্টর জমি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর ফসলি জমির ফলন একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।
এ ছাড়া ফেনী উপজেলায় মোট ৩৪ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে বন্যায়। এতে সব মিলিয়ে ৬০৯ মেট্রিক টন ফসল নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর জেলায় ২৮ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এতে নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ৫৬২ টন ফসল।
বন্যায় চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতকানিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলার কৃষকরা।
সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের কৃষক আমির হোসেন প্রায় ১১ কানি (৪ দশমিক ৪০ একর) জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। তার মধ্যে দুই কানি (৮০ শতক) জমিতে আউশ ধান চাষ করেন তিনি। একরাশ হতাশা নিয়ে আমির বলেন, ‘ধানের শীষ আসার সময়েই বন্যাটা এল, আর সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল।’
একইভাবে সব হারিয়ে চোখে সরষে ফুল দেখছেন চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ইউনিয়নের কৃষক জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বন্যায় আমার ৫ একর ফসলি জমির পুরোটাই ভেসে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক অরবিন্দ কুমার রায়। তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের আমনের বীজ দেয়া গেলে আবার বীজতলা তৈরি করে চারা রোপণ করতে পারবেন। যদি সেটি সম্ভব না হয়, আমরা আগামী শীতকালীন চাষে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করব।’
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ