25 C
আবহাওয়া
৩:৫০ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১২৯ (পিরোজপুর-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১২৯ (পিরোজপুর-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিকনির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে পিরোজপুর-৩ আসনের হালচাল।

YouTube player

পিরোজপুর-৩ আসন 

পিরোজপুর-৩ সংসদীয় আসনটি মঠবাড়ীয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদের ১২৯তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বাকশালের মহিউদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৭৩ হাজার ৯ শত ১৭ জন। নির্বাচনে বাকশালের মহিউদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৬ হাজার ৮ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পাটির ইঞ্জিনিয়ার এম.এ জব্বার। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৮ শত ৪৪ ভোট। মহিউদ্দিন আহমেদ পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ইঞ্জিনিয়ার এম. এ জাব্বারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদানকারি ইঞ্জিনিয়ার এম. এ জাব্বারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৬ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ৭৯ হাজার ৯ শত ৬৮ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৮শত ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন আহমেদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ২ শত ৬৩ ভোট। আনোয়ার হোসেন মন্জু এ আসনটি ছেড়ে দিলে উপ নির্বাচনে তার স্ত্রী তাসমিমা হোসেন বিজয়ী হন।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: রুস্তম আলী ফরাজী বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮ শত ৬৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১১ হাজার ৭ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদানকারি রুস্তম আলী ফরাজী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৯ শত ৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মিসেস মাহমুদা সওগাত। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৭ শত ৫৬ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৩ শত ৩২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮ শত ৮৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ৪ শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজী। আনারস প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৮ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজী বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯ শত ৮২ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৪ হাজার ৭ শত ৪৯ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজী বিজয়ী হন। আনারস প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৯শত ২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আনোয়ার হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৮ শত ৪৮ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮ শত ৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫১ হাজার ৪ শত ৭৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করা রুস্তম আলী ফরাজী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির রুহুল আমীন দুলাল, বটগাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলনের মোহাম্মদ আবদুল লতিফ সিরাজী, কাস্তে প্রতীকে সিপিবির দিলীপ কুমার পাইক, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছগির হোসেন, কলারছড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ এবং আপেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রার্থী না দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী রুস্তম আলী ফরাজীকে সমর্থন দেয়।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজী বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩ শত ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির রুহুল আমিন দুলাল। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭ হাজার ৬ শত ৯৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, নবম, সংসদে আওয়ামী লীগ, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম, একাদশে জাতীয় পার্টি এবং দশম সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর পিরোজপুর-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পিরোজপুর-৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৭.৯০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.২৭%, বিএনপি ১২.৪৭%,জাতীয় পাটি ৩৩.৬১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৭.৬৫% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৭৭%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৩৪%, বিএনপি ২৫.৪২%, জাতীয় পাটি ৩৭.৩১%, জামায়াতে ইসলামী ৬.১৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭০.৩৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.৬৩%, ৪দলীয় জোট ৫৮.১৩%,জাতীয় পার্টি ৪.৫২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১০.৭২% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.১১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৩.৫৫%, ৪দলীয় জোট ২৩.১৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৩.৩২% ভোট পায়।

পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়ীয়া উপজেলা) এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির ডাক্তার রুস্তম আলী ফরাজী। আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোটগত নির্বাচন করলে এই আসনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়ন এক ধরনের নিশ্চিত।

তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য ডা.আনোয়ার হোসেন, মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিউদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌস, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজউদ্দিন আহমেদ, মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক সেলিম মাতুব্বর।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমীন দুলাল। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান জাকির।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পিরোজপুর-৩ আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত এই আসন চারবার নিজেদের দখলে থাকলেও গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অন্তঃকোন্দল ও জাতীয় রাজনীতির কারণে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। ফলে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। তবে নানা কারণে রুস্তম আলী ফরাজীর জনপ্রিয়তায় ধস্ নেমেছে। তার ওপর ভর করে এবার দুর্গ ফিরে পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল বেশ প্রকট।

বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজের মধ্যে বিরোধ চরমে। ফলে যা ভোটের লড়াইয়ে বেশ প্রভাব ফেলবে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অগোছালো। তার ওপর রয়েছে অন্তঃকোন্দল।

এই প্রেক্ষাপটে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১২৯তম সংসদীয় আসন, পিরোজপুর-৩ আসনে কে জিতবে? তা নির্ভর করছে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর।

বিএনএ/ শিরীন,রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ