বিএনএ, জামালপুর : দেশের বৃহত্তম সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা (জেএফসিএল) এর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দৈনিক হাজিরা (কাজ নাই, মজুরি নাই) ভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী সরবরাহ ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শোকজ করেছেন আদালত।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) আদালতের কারণ দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আবু সালেহ মোহা. মোসলেহ উদ্দিন।
এই বিষয়ে গত ১৭ এপ্রিল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে, যেখানে তারা ২৪ মাসের জন্য অস্থায়ী ও অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, যমুনা সার কারখানায় “কাজ নাই, মজুরি নাই” ভিত্তিতে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য একটি আউটসোর্সিং দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ দরপত্রে অংশ নেয় মোট ১২টি প্রতিষ্ঠান। যাচাই-বাছাইয়ে উপজেলার চরপাড়া এলাকার মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজের দরপত্রকে প্রাথমিকভাবে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়, কারণ তাদের কমিশন প্রাক্কলিত দরের সমান (১৬ টাকা) ছিল।
তবে পরবর্তীতে রহস্যজনকভাবে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে রাজধানীর হাতিরপুলস্থ মেসার্স আল মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেডকে কার্যাদেশ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, যাদের কমিশন ছিল বেশি (২৫ টাকা), যা সরকারকে অতিরিক্ত খরচে ঠেলে দেয়।
মামলায় যাদের শোকজ করা হয়েছে:
আবু সালেহ মোহা. মোসলেহ উদ্দিন – এমডি ও দরপত্র কমিটির সভাপতি
দেলোয়ার হোসেন – উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন), সদস্য সচিব
ডা. কামরুজ্জামান – ডুয়েট, যন্ত্র কৌশল বিভাগ
মইনুল ইমরান – মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন)
ইকবাল হোসেন – মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ)
আব্দুল হামীম – উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক)
এ আর এম রেদুয়ানুর রহমান – জনতা ব্যাংক, তারাকান্দি শাখা
মেসার্স আল মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেড – অভিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
মামলার বাদী মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রাশেদুজ্জামান লিটন অভিযোগ করেন, শুরুতে তার প্রতিষ্ঠানকে ১ মার্চ ২০২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৭ পর্যন্ত ২৪ মাসের জন্য কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশনামা প্রস্তুত করা হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, রহস্যজনক কারণে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মেসার্স আল মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেসকে অবৈধভাবে কার্যাদেশ প্রদানের প্রক্রিয়া করে। পরে কার্যাদেশ বাতিলের দাবিতে ২৪ মাসের জন্য অস্থায়ী ও অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করা হলে আদালত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।
যমুনা সার কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন বলেন, শুরুতে আমাদের কিছু দুর্বলতা ছিল। এ কার্যাদেশের জন্য কর্মী সরবরাহের লাইসেন্স জমা দিতে হয়, কিন্তু মেসার্স এ এন এন্টারপ্রাইজ বাণিজ্যিক লাইসেন্স দিয়েছে, যা আমরা শুরুতে বুঝতে পারিনি। পরে মেসার্স আল মমিন আউটসোর্সিং সার্ভিসেস লিমিটেড অভিযোগ দাখিল করে। যা খোঁজ নিয়ে এবং সকল অভিযোগ নিষ্পত্তি করে এ প্রতিষ্ঠানকেই কার্যাদেশ প্রদানের প্রস্তুতি চলছিল।
তিনি আরও বলেন, এ এন এন্টারপ্রাইজের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার আদালতের শোকজ নোটিশ হাতে পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সাথে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।/শাম্মী