আবদুল লতিফ ১৯২৭ সালে বরিশাল সদরের রায়পাশায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম- মো. আমিন উদ্দিন, মাতার নাম-হাকিমুন্নেছা। তিনি রায়পাশা হাই স্কুল থেকে দশম শ্রেণি পাশ করেন। গান পাগল এই মানুষটি পরে গানের আকর্ষণে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে সংগীত জগতে প্রবেশ করেন।
গীতিকার, সুরকার, সংগীত শিল্পী আবদুল লতিফ ভাষা-আন্দোলনসহ এদেশের গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিজেই রচনা করেন ভাষা-আন্দোলনের বিখ্যাত গান ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’। এই গানটি একুশের আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মুখে মুখে বহুল প্রচারিত ছিল এবং জনপ্রিয় গান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গুলি বর্ষণের পর এক ঘণ্টার মধ্যে রেডিও শিল্পীদের যে ধর্মঘট হয়েছিল, আবদুল লতিফ ছিলেন তাঁর অন্যতম সংগঠক ও উদ্যোক্তা। তিনি একুশের উপর প্রচুর গান রচনা ও সুরারোপ করেন।
শিল্পী লতিফ একুশের অমর সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’-এর প্রথম সুরকার। এ প্রসঙ্গে আবদুল লতিফ বলেন:
‘১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনের উপর লেখা আবদুল গাফফার চৌধুরীর আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ ছাপানো একটি লিফলেট তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র বর্তমানে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম আমাকে দেন। তার মেজো ভাই মরহুম আতিকুল ইসলাম এবং ইকবাল আনসারী খান এরা তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র। ঢাকা কলেজ তখন ফুলবাড়িয়া রেল স্টেশনের পাশে। তাদের এক অনুষ্ঠানে গাইবার জন্যই গানটি আমাকে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি হয়েছিল তৎকালীন বৃটানিয়া সিনেমা হলে। অধুনালুপ্ত গুলিস্তান সিনেমা হলের উল্টোদিকে ছিলো এই সিনেমা হল। ঐ অনুষ্ঠানে আমি এই গানটি সুর করে প্রথম গাই।’
ঢাকা কলেজের তৎকালীন ভিপি মাশির হোসেন বলেন: ‘১৯৫৩ সালের মার্চ বা এপ্রিল মাসে ঠিক ১ বছর পর তদানীন্তন ঢাকা কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে রমনার ব্রিটানিয়া সিনোম হল (বর্তমানে যেখানে রমনা ভবন) একটি গীতি নকশা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আমি তখন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি।…
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ঠিক পূর্বক্ষণেই কলেজের অধ্যক্ষ আমাকে ডেকে পাঠালেন। সেটি দেখাও। আমি দ্রুত তা নিয়ে আসলাম। তিনি ততধিক দ্রুততার সঙ্গে স্ক্রিপ্টের পাতা উল্টে গেলেন, এক জায়গায় এসে তার দৃষ্টি থমকে গেল। তিনি বললেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি গাইতে পারবে না। এছাড়া সব ঠিক আছে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা সবাই বিমুখ। কেননা গানটি ছিল স্ক্রিপ্টের মাঝামাঝি এবং এই গানটির জন্য একজন পেশাদার শিল্পীকে ওই অনুষ্ঠানে নেয়া হয়েছিল, তিনি ঐ গানের সুরারোপও করেছিলেন। তিনি হলেন প্রখ্যাত গণসংগীত শিল্পী আবদুল লতিফ।…
ভাষাসংগ্রামী আবদুল লতিফ ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক(১০) আবদুল গাফফার চৌধুরী পর্ব : ০৩