বিএনএ ডেস্ক : গত ১৭ জুন মঙ্গলবার অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রথবারের মত সরকারের ডাকে সাড়া দেয়নি জামায়াত। এদিন ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা। বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এ আলোচনায় অংশ নিলেও তা বয়কট করে জামায়াত।
অবশ্য কমিশনের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টা পরে হলেও জামায়াতকে বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সে অনুরোধও রাখেনি জামায়াত।
জামায়াতের অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে তাদের ‘ইগনোর’ করা হয়েছে, যা তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। তাই তারা ‘প্রতিবাদ’ হিসেবে আলোচনা থেকে দূরে থাকছে।
লন্ডনে যৌথ বিবৃতিতে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য যে সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে তা প্রধান উপদেষ্টা দেশে এসে করলে ভালো হতো বলে মনে করেন জামায়াত নেতারা। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা সংলাপে যোগ দিচ্ছি না।’
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে জামায়াত। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষ থাকতে পারেননি। এরপর থেকে রাজনৈতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছিলো।
তাহলে কি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব তৈরি হয়েছে? জামায়াত কি এ সরকারকে সমর্থন করবে না? নতুন কোন রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করবে?
তবে সেসব প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগেনি। বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে গিয়ে হাজির হয় জামায়াত। জামায়াতের পক্ষ থেকে সেখানে অংশ নেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ। জামায়াতের অভিমান ভাঙল প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ফোনে।
দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষ অবস্থানের আশ্বাস পেয়েই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় আবারো অংশ নিয়েছেন তারা।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমাদের মাননীয় আমিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কথা বলেছি এবং উনি আশ্বস্ত করেছেন যে, উনার সরকার নিরপেক্ষ সরকার। উনারা কোনো বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর প্রতি ইনক্লাইন্ড (অনুরক্ত) না।
এদিকে ১৮ জুন বুধবার সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন প্রস্তাব নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলাকালে বিরতির সময় হাতে হাত রেখে ছবি তোলেন তারা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে বুকে টেনে নেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। নাহিদ ইসলামকে টেনে নিয়ে এসে সালাহউদ্দিন আহমেদ সেখানে উপস্থিত আলোকচিত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এবার ভালো করে ছবি উঠান, ভালো করে উঠান।
এসময় হাতে হাত রেখে পরস্পর সৌহার্দ্যের বার্তা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, সরকারের সাথে জামায়াতের ভিন্নমতের থেকে বিএনপির সাথে তাদের দূরত্বটা বেশি উদ্বেগজনক।
সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বিভিন্ন বিষয়ে, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে দলগুলোর ভিন্নমত রয়েছে। এখন দেখার বিষয় তারা যে সৌহার্দ্যের বার্তা দিয়েছেন তা ধরে রাখতে পারেন কিনা।
শামীমা চৌধুরী শাম্মী
