26 C
আবহাওয়া
১১:৫৯ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৩৭ (বগুড়া-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৩৭ (বগুড়া-২)

বগুড়া-২

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বগুড়া-২ আসনের  হালচাল।

বগুড়া-২ আসন 

বগুড়া-২ সংসদীয় আসনটি শিবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩৭ নাম্বার আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জামায়াতে ইসলামীর শাহাদুজ্জামান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনে ভোটার  ছিলেন ১ লাখ ৭০ হাজার ৫শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯ জন। নির্বাচনে  জামায়াতে ইসলামীর শাহাদুজ্জামান বিজয়ী হন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৯ শত ৬৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মতিউর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ২শত ১৩ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপি প্রার্থী রেজাউল বারী ডিনা বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির শাসনামলে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী রেজাউল বারী ডিনা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ৯ হাজার ৪শত ৪৬ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিস রহমান। তিনি পান ৩ হাজার ১ শত ১৮ ভোট। এই সংসদের মেয়াদ ছিল  মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ কে এম হাফিজুর রহমান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮ শত ৬৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ১ শত ২২ জন। নির্বাচনে বিএনপির এ কে এম হাফিজুর রহমান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ৩শত ৪৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর শাহাদুজ্জামান। দাঁড়িপাল্লা  প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৫ শত ৯৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির রেজাউল বারী ডিনা বিজয়ী

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৫ হাজার ৮ শত ১৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ১ শত ৬৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির রেজাউল বারী ডিনা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৬ হাজার ৮ শত ৬ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মাহামুদুর রহমান মান্না। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৮ শত ১৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ কে এম হাফিজুর রহমান বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন  ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪ শত ২৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৫ হাজার ১ শত ৫৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির এ কে এম হাফিজুর রহমান  বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে  তিনি পান ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩ শত ৬১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ। লাঙ্গল  প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ১ শত ৯০ ভোট।২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন   ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫ শত ৬৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মাহমুদুর রহমান মান্না, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জামাল উদ্দিন, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের শফিকুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। আওয়ামী লীগ এ আসনে প্রার্থী দেয়নি। সমর্থন দেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহকে।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮৪ হাজার ২৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ৭ শত ৫৬ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে। মাহমুদুর রহমান মান্না আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান এবং বিএনপি প্রার্থী রেজাউল বারী ডিনার কাছে হেরে যান।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। তিনি আবারও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এ আসনে বিএনপির সমর্থনে প্রার্থী হতে পারেন। মাহমুদুর রহমান মান্নার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপিতে মতবিরোধ রয়েছে।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম। জামায়াত ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহাদুজ্জামান বিএনপি সমর্থনে অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন শিবগঞ্জ পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক এবং বিশিষ্ট  ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন।

এছাড়া একাদশ জাতীয় সংসদের প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জামাল উদ্দিন, মুসলিম লীগের শফিকুল ইসলাম দলীয় প্রার্থী হিসাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বগুড়া-২ আসনে পঞ্চম সংসদে জামায়াতে ইসলামী,  ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদে বিএনপি, দশম সংসদে আওয়ামী লীগ, একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি প্রার্থী বিজয়ী হন।

টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও  অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বগুড়া-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্ঠা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ আসনে ভোট প্রদান করেন ৫৮.৬৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১০.৯৬%, বিএনপি ২৪.২১ %, জাতীয় পার্টি ৬.১৬%, জামায়াত ইসলামী ৩৩.৯৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৪.৭% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮০.৫৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৩.৭৯ %, বিএনপি ৫১.৫৮ %, জাতীয় পার্টি ১৪.৯৩%, জামায়াত ইসলামী ১৭.০৬%, স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ২.৬৪% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৮৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.১১%, ৪ দলীয় জোট ৬৩.৭৭ %, জাতীয় পার্টি ৯.৬৭%,স্বতন্ত্র ও  অন্যান্য ০.৪৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯২.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় মহাজোট ৩৯.৪৮%, ৪ দলীয় জোট ৫৯.৬৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ০.৮৫% ভোট পায়।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বগুড়া-২ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ়। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে জামায়াতে ইসলামী।যদিও এখন তাদের এখন সাংগঠনিক তৎপরতা নেই। নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন না করলে তাদের প্রচুর ভোট বিএনপির বাক্সে যাবে।আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা নড়েবড়ে। দ্বাদশ সংসদ  নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে  জাতীয় সংসদের ৩৭ নম্বর  বগুড়া-২ আসনে  বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি,ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ