25 C
আবহাওয়া
১:০০ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » আইসিটি’তে বিচার শুরু এপ্রিলে!

আইসিটি’তে বিচার শুরু এপ্রিলে!


জুলাই-আগস্টে গণহত্যা, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আওয়ামীলীগের ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

YouTube player

গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালের আদেশের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুই মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের কথা ছিল। কিন্তু এই তদন্ত সম্পন্ন করতে আরও সময় প্রয়োজন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানায় প্রসিকিউশন।

এর আগে, গত ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল

অভিযুক্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া আগামী এপ্রিল মাসে শুরু হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

এই আইনজীবী আরও জানান, “আমরা আশা করি, আগামী মার্চ মাসের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হবে। যদি মার্চ মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট আমরা পেয়ে যাই, তাহলে এপ্রিল মাস থেকে বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক পর্বটা শুরু হবে বলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

গতবছর জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভ দমনে শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতারা যেভাবে বলপ্রয়োগ করেছে, সেখানে “গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের” প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।

দমন-পীড়নের ওইসব ঘটনা “মানবতাবিরোধী অপরাধে”র কাতারে পড়তে পারে বলেও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো কাজে লাগাতে চায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

তাজুল ইসলাম বলেন “ইতোমধ্যেই আমরা যোগাযোগ শুরু করেছি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের কাছ থেকে গণহত্যাসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে,” ।

শেখ হাসিনাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্তদের বিচার করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের তথ্য-প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত পাঁচই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, গুম, অপহরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে আড়াইশ’টিরও বেশি মামলা হয়েছে। ১৬টি মামলা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে দায়ের করা ২টি মামলা দ্রুত শেষ করতে চায় রাষ্ট্রপক্ষ। আগামী অক্টোবরের মধ্যে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছেন জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে শেখ হাসিনার বিচার দ্রুত শুরু করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গণআন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু গত ছয় মাসেও শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে এ ব্যাপারে রিকোয়েস্ট করা হয়েছে। ভারত কোনো রিপ্লাই দেয়নি।

উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভ দমন ও হত্যার ঘটনা তদন্ত শেষে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় ওএইচসিএইচআর।

সেখানে বলা হয়েছে, “এটা বিশ্বাস করার ভিত্তি আছে যে, ১৫ জুলাই থেকে পাঁচই আগস্ট পর্যন্ত সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাঠামো, আওয়ামীলীগের সহিংস গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে একত্রিত হয়ে মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে পদ্ধতিগতভাবে জড়িয়ে পড়েছিলো।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের প্রায় ১৪০০ জনের মতো মানুষ নিহত হন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগের মৃত্যু হয়েছে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে।

এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয়কাজে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নেতৃত্ব দেন বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

“তখনকার প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন এবং বিশেষভাবে বিক্ষোভের মূল হোতা, সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার, হত্যা এবং হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন,” প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যকে উদ্ধৃত করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রোরি মুনগোভেন বলেন, ” প্রতিবেদনটিতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে যা আন্তর্জাতিক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং সেসবের সুবিচার হওয়া প্রয়োজন।”

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ