ফ্রিল্যান্সিং এ আগ্রহীদের জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার A to Z :
গ্রাফিক্স ডিজাইন হচ্ছে কোনো একটি ম্যাসেজ বা তথ্যকে সৃজনশীলতা দিয়ে রঙ, রেখা ও বিভিন্ন সেপের মাধ্যমে মানুষের সামনে তুলে ধরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখন এই তথ্য বা ম্যাসেজগুলো হয় মার্কেটিং সম্পর্কিত।
গ্রাফিক্স ডিজাইন হল একটি আর্ট বা শিল্প।
এখানে একজন শিল্পী কম্পিউটার সফ্টওয়্যার এর মাধ্যমে কল্পনা, তথ্য
এবং গ্রাহকদের ধারণা গুলির সাথে যোগাযোগ করার জন্য, দৃশ্যমান ধারণা তৈরি করে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?
গ্রাফিক্স শব্দটি জার্মান শব্দ থেকে এসেছে।এক কথায় চিত্র দ্বারা নকশা তৈরি করাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন বলা হয়। এটি এমন একটি জনপ্রিয় এবং সৃজনশীল প্রক্রিয়া যেখানে আপনি নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে প্রফেশনে বদলে দিতে পারেন।
মার্কেটিং বাদেও বিভিন্ন সেক্টর রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনের আওতায়।
গার্মেন্টস সেক্টর তার মধ্যে অন্যতম। গার্মেন্টস খাতের যেকোনো পণ্য তৈরি করার আগে এর ডিজাইন করতে হয়।
আর আপনি জেনে থাকবেন যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টর পৃথিবী বিখ্যাত। তাই এ খাতে যোগ দিলে সেটি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য খুবই উপকারী হবে।
আপনি বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিতে কাজের সুযোগ পাবেন যদি দক্ষ ডিজাইনার হতে পারেন। পাশাপাশি আপনি ফ্রিলান্সিং করেও অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে এই ডিজাইনিং প্রয়োজন হয়।
ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক্স ডিজাইন কেন এতো জনপ্রিয়?
ক্যারিয়ার হিসেবে এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কেন এতো জনপ্রিয় তা অনেক মানুষেরই কৌতূহল। আসলে সত্যি কথা বলতে গেলে এর অসংখ্য কারন রয়েছে। যে কেউই চাইবে এমন একটি পেশা নির্ধারণ করার জন্য যার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। চলুন দেখে আসি গ্রাফিক্স ডিজাইন ক্যারিয়ার হিসাবে কেন এতো জনপ্রিয়ঃ
সৃজনশীল পেশা
গ্রাফিক্স ডিজাইন পরিপূর্ণরুপে একটি সৃজনশীল পেশা। এই পেশায় আপনার সৃজনশীলতাই আপনার মূল হাতিয়ার, পুঁথিগত বিদ্যা এখানে তেমন একটা কাজে আসে না। আপনি যদি সৃজনশীল না হন, তাহলে আপনি এই সেক্টরে উন্নতি করতে পারবেন না।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিভিন্ন সফটওয়্যারের ব্যবহার সঠিকভাবে না জানলে আপনি আপনার সৃজনশীলতা সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন না। আপনাকে অনেক চর্চা এবং ধৈর্য্যের সাথে বিভিন্ন প্রজেক্ট করতে হবে নিজের কাজের পারদর্শিতা বাড়িয়ে নেয়ার জন্যে।
আপনি হয়ত অনেক ডিজাইন অনলাইনে পাবেন, কিন্তু নিজেকে যদি সেই ফ্রি ডিজাইনগুলোর মধ্যেই আটকে রাখেন তাহলে আপনার জন্যে এই পেশা নয়। আপনাকে নিজেকে শেখার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে।
আপনি যত বেশি সৃজনশীলতার সাথে আপনার আইডিয়া ফুটিয়ে তুলতে পারবেন ততই আপনার কাজের কোয়ালিটি উন্নত হবে। আপনি যদি আপনার সৃজনশীলতাকে স্বাধীনভাবে ফুটিয়ে তুলতে ভালবাসেন তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইন পেশায় আপনি উন্নতি করতে পারবেন।
উচ্চতর চাহিদা
বর্তমান বিশ্বে ভিজুয়াল কনটেন্ট সব থেকে বেশি পপুলার হচ্ছে। সাথে সাথে গ্রাফিক্স ডিজাইনও অনেক বেশি চাহিদাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ওয়েবসাইটের কাজের জন্যে এখন গ্রাফিক্স ডিজাইন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে, কারন এই ইন্ডাস্ট্রিতে পেশাগত মানুষ হাতে গোনা। আপনি যদি নিজেকে এই কাজে পারদর্শী করে তুলতে পারেন তাহলে বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানিতে চাকরি পেতে পারেন। যেখানে আপনার বেতনের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক বেশি।
বাড়িতে বসে কাজের সুযোগ
গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, আপনি যেকোন জায়গায় বসে এই কাজ করতে পারেন। আপনাকে কোন অফিসে বসে কাজ করতে হবে না। আপনি চাইলে ঘরে বসে কাজ করতে পারেন।
শুধু মাত্র একটি ল্যাপটপ ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টল করেই আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন যেকোন জায়াগায় বসে। এই পেশাটা সম্পূর্ণরূপে কাজের পারদর্শিতার উপরে নির্ভর করে বলে, শিক্ষাগত যোগ্যতা খুব বেশি জরুরী হিসাবে ধরা হয় না। আপনি যদি পারদর্শী হন, তাহলেই আপনি এই সেক্টরে কাজ করতে পারবেন।
কাজের স্বাধীনতা
গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা স্বাভাবিকভাবে স্বাধীনচেতা হন। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে ভালবাসেন। আপনি যদি ইচ্ছা করেন তাহলে আপনি নিজে নিজেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারেন। আপনি নিজের পোর্টফোলিও ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করে নিজেই কাজ করতে পারেন।
আপনি অনলাইনে অনেক প্লাটফর্ম পাবেন যেখানে আপনি নিজের একাউন্ট ক্রিয়েট করে নিজের কাজগুলো প্রদর্শন করে রাখতে পারেন। আপনার কাজ দেখে যদি কারো ভাল লাগে তাহলে তারাই আপনার সাথে যোগাযোগ করবে তাদের প্রোজেক্টে কাজ করার জন্যে।
আপনি যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান তাহলে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে এখনই কাজ শুরু করে দিতে পারেন। ঘুড়ি লার্নিং এর গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্সে এখনই রেজিস্ট্রেশন করুন এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা শুরু করে দিন।
অধিক আয়ের সুযোগ
যেহেতু বর্তমান বিশ্ব ভিজুয়্যাল কন্টেন্ট এর দিকে ঝুকে পড়ছে, আপনি চাইলে এখনই গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে অধিক আয় নিশ্চিত করতে পারেন। আপনি হয়ত জানেন না যে অনেক কোম্পানি আছে যারা শুধুমাত্র লোগো ডিজাইন করার জন্যে লক্ষ্ লক্ষ টাকা ব্যয় করে।
আপনি যদি ভালোভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন তাহলে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানি আছে যারা তাদের প্রোডাক্টগুলো ভালোভাবে তাদের ওয়েবসাইটে ফুটিয়ে তুলতে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের সাহায্য নিয়ে থাকে।
চাকরির সুযোগ
গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে আপনি দেশি বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করতে পারবেন। বিদেশি কোম্পানিগুলোতে কাজ করার চেয়ে সব থেকে বেশি ভালো হয় যদি আপনি বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করা শুরু করেন।
কারন একবার কাজ করতে থাকলে বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে এবং তাদের মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের কোম্পানির সাথে কাজের সুযোগ পাবেন।
পাশাপাশি আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে দেশি কোম্পানিতে কাজ করতে চান, তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনাকে গ্রাজুয়েট হতে হবে এবং এই বিষয়ক সার্টিফাইড কোর্স করতে হবে।
তবে অনেক দেশি কোম্পানিও এখন একাডেমিক যোগ্যতার থেকেও দক্ষতার উপরেই বেশি ফোকাস দিচ্ছে। আপনি চাইলে ওইসব কোম্পানিতে কাজ করতে পারেন।
প্রতিভা দেখানোর সুযোগ
আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশে প্রতিভা দেখানোর সুযোগ কম। সুযোগ থাকলেও সেগুলার তেমন মূল্যায়ন হয় না। গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখলে আপনি দেশি বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কাজ করতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে আপনার যদি প্রতিভা থাকে, তাহলে সেটা দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না। আপনি যথাযথ মূল্যায়নও পাবেন। আপনার প্রতিভা গুলো চাইলে পোর্টফোলিও আকারে মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রদর্শন করতে পারবেন। সেগুলো দেখে ক্লায়েন্ট আপনাকে খুব সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন।
উচ্চ শিক্ষার প্রয়োজন নাই
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য আপনাকে কোনো উচ্চতর ডিগ্রিধারী হওয়া লাগবে না। মার্কেটপ্লেসগুলোতে অনেক মানুষ আছে যারা স্কুলের গন্ডিও ঠিক করে পার করতে পারেন নি। ছাত্র থেকে শুরু করে গৃহিণীরা পর্যন্ত এখন গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজের সাথে সংযুক্ত।
এখানে তেমন কোনো রিকোয়ারমেন্ট থাকে না এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে। তাই আপনি খুব বেশি একটা শিক্ষিত না হয়েও গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এখানে কেউ আপনার কাছে শুনতে চাইবে না যে আপনি কতটা শিক্ষিত। এখানে আপনার ক্লায়েন্টরা শুধু দেখতে চাইবে আপনার দক্ষতা।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও সম্মানজনক আয়
আরও বড় একটি আশার বাণী হচ্ছে এই খাতের ভবিষ্যত সম্ভাবনা অনেক বেশি। বর্তমানে এমন একটি সময় এসে গেছে যেখানে আমরা মার্কেটিং বলতে শুধু মাত্র ডিজিটাল মার্কেটিংকেই বুঝি।
একটা সময় এর মাত্রা ও আওতা আরও বাড়বে। নতুন নতুন ডিজিটাল মার্কেটিং এর মেথড বের হবে যেগুলো মুলত গ্রাফিক্স ডিজাইন এর উপরে নির্ভরশীল হবে। তাই যারা এই সেক্টরে নিজেদের ক্যারিয়ার দাঁড় করানোর কথা ভাবছেন, তারা নিঃসন্দেহে অনেক সুদূরপ্রসারী একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
একদম শুরুতে একজন স্কিলফুল গ্রাফিক্স ডিজাইনার অনায়াসে দেশীয় কোম্পানি থেকে মাসে ১০-২০ হাজার টাকা আয় করতে পারে।অভিজ্ঞতা ভেদে আয়ের ভিন্নতা আসে যেমন একজন অভিজ্ঞ গ্রাফিক্স ডিজাইনার মাসে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা অনায়াসে আয় করতে পারে।অনেকে দীর্ঘ কাজ করার পর নিজের এজেন্সি শুরু করে তখন সে একই সাথে দেশী এবং বিদেশী ক্লাইন্টদের সাথে কাজ করে মাসে ৭-৮ লক্ষ টাকা আয় করতে পারে।
গ্রাফিক ডিজাইনের কাজের ধরণ
প্রথমত গ্রাফিক্স ডিজাইন ২টা ভাগে বিভক্ত
১।স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স
২।মোশান গ্রাফিক্স
স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স আবার মুলত ৩ রকম ঃ
১।রাস্টার ইমেজ(পিক্সেল বেসিস)
২।ভেক্টর ইমেজ(পিক্সেল ইন্ডিপেন্ডেন্ট)
৩।টাইপোগ্রাফি(২রকমের হয়ে থাকে)
লেখক : এ,কে,এম ,শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী