বিএনএ, ঢাকা: বাংলা ব্যান্ড সংগীতের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর চতুর্থতম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর লাখো ভক্ত, পরিবার পরিজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান সবার প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু। এদিন সকালে নিজ বাসায় তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েত বাজারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৬ সালে কলেজ জীবনে ‘আগলি বয়েজ’ নামক ব্যান্ড গঠনের মাধ্যমে সংগীত জগতে পথচলা শুরু হয় তার।
১৯৭৭ সালে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডে যোগদান করেন এবং এই দলটির সঙ্গে ছিলেন ১৯৮০ সাল পর্যন্ত। একই বছরে তিনি জনপ্রিয় রক ব্যান্ড সোলস-এর প্রধান গিটারবাদক হিসেবে যোগদান করেন। সোলসের সঙ্গে তিনি ১৯৯০ সাল পর্যন্ত পথ চলেন তিনি
১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল নিজের ব্যান্ড লিটল রিভার গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। যা পরে লাভ রান্স ব্লাইন্ড বা সংক্ষেপে এল আর বি নামে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি তার মৃত্যু অবধি ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর ধরে ওই ব্যান্ডটির সঙ্গে ছিলেন।
প্রয়াত ব্যান্ড কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এদিন নানাভাবে স্মরণ করার কর্মসূচি তার পরিবার, সহকর্মী ও ভক্তদের। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে রয়েছে বিশেষ আয়োজন। সেসব অনুষ্ঠানে শোনানো হবে তার জনপ্রিয় গানগুলো। আলোচনা হবে বাচ্চুর জীবনের নানা বিষয় নিয়ে।
আইয়ুব বাচ্চুর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে মঙ্গলবার ১২টার দিকে তার একদল ভক্তকে রাজধানীর মগবাজারের ওয়ারলেস এলাকায় খাবার বিতরণ করতে দেখা গেল। কয়েকটি কাটুনে ভরা বিরিয়ানির প্যাকেট। রিকশাওয়ালা, ভিক্ষুক কিংবা পথচারীদের যাকেই তাদের খাবার দেওয়ার মতো মনে হচ্ছে, তাদের হাতেই ধরিয়ে দিচ্ছে একটি করে বিরিয়ানির প্যাকেট।
আইয়ুব বাচ্চু তার এই পথ চলায় বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম শীর্ষ তারকা হয়ে উঠেছিলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তার সঙ্গে। ভক্তরা তাকে নাম দিয়েছিল ‘বস’। মূলত রক ঘরানার গান করতেন। ব্যান্ডসংগীতের প্রতি তারুণ্যের জোয়ারের ধারা ধরে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
তবে শুধু রক বা ব্যান্ডের গানে সীমাবদ্ধ ছিলেন না আইয়ুব বাচ্চু। আধুনিক গান, লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। খুব অল্প গান করেছিলেন চলচ্চিত্রে। সেই গানগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং গায়ক। তার প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম ‘রক্তগোলাপ’। এটি ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। তবে সফলতা শুরু হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ময়না’র মাধ্যমে।
পরে ১৯৯৫ সালে ‘কষ্ট’ অ্যালবামটি প্রকাশ করেন আইয়ুব বাচ্চু, যা প্রচুর সফলতা অর্জন করে। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হৃদয়’, ‘আমিও মানুষ’ গানগুলো। তার অন্য একক অ্যালবামগুলো- ‘সময়’ (১৯৯৮), ‘একা’ (১৯৯৯), ‘প্রেম তুমি কি’ (২০০২), ‘দুটি মন’ (২০০২), ‘কাফেলা’ (২০০২), ‘রিমঝিম বৃষ্টি’ (২০০৮), ‘বলিনি কখনো’ (২০০৯), ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫)।
এদিকে আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবি ১৯৯২ সালে ‘এলআরবি ১’ এবং ‘এলআরবি ২’ বাংলাদেশের প্রথম ডবল অ্যালবাম প্রকাশ করেছিল। তাদের তৃতীয় অ্যালবাম ‘সুখ’ প্রকাশ হয় ১৯৯৩ সালে। যা ছিল অন্যতম ব্যবসাসফল অ্যালবাম। এর পর ধারাবাহিকভাবে অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে কেবল সফলতাই পেয়েছে এলআরবি।
দলটির অনান্য অ্যালবামগুলো- ‘তবুও’ (১৯৯৪), ‘ঘুমন্ত শহরে’ (১৯৯৫), ‘ফেরারি মন’ (১৯৯৬), ‘আমাদের’ (১৯৯৮), ‘বিস্ময়’ (১৯৯৮), ‘মন চাইলে মন পাবে’ (২০০১), ‘অচেনা জীবন’ (২০০৩), ‘মনে আছে নাকি নাই’ (২০০৫), ‘স্পর্শ’ (২০০৮), ‘যুদ্ধ’ (২০১২), ‘রাখে আল্লাহ মারে কে’ (২০১৬)।
ক্যারিয়ারে অসংখ্য কালজয়ী ও জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু। এরমধ্যে রয়েছে— ‘চলো বদলে যাই’, ‘হাসতে দেখো’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘রুপালি গিটার’, ‘মেয়ে’, ‘আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘সুখের এ পৃথিবী’, ‘ফেরারি মন’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘সেই তারা ভরা রাতে’, ‘কবিতা’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি, ‘তিন পুরুষ’, ‘যেওনা চলে বন্ধু’, ‘বেলা শেষে ফিরে এসেসহ অসংখ্য গান।
তার সব কালজয়ী গান গাওয়ার সময় তিনি নিজে যেমন দরদ দিয়ে গান গেয়েছেন, তেমনি দর্শকও কেঁদেছে অঝোর ধারায়। আবেগী এসব গানে সুখ, দুঃখ বেদনা , প্রেম, ভালোবাসা, কষ্ট সব অনুভূতিই আলাদা এক মাত্রা পেতো তার কন্ঠে।
২০১৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এই কিংবদন্তী। জীবনের সব আয়োজন ফেলে দরজার ওপাশে চলে গেলেও দরজার এপাশে তিনি রেখে গেছেন তার জন্য কোটি ভক্তের অশ্রুসিক্ত চোখ।
বিএনএ/এমএফ