20 C
আবহাওয়া
১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র একটি প্রামাণিক গ্রন্থ যা ১৯৭১ সালে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনার বিস্তারিত তথ্যভান্ডার হিসাবে স্বীকৃত। ১৫ খণ্ডে প্রকাশিত এ তথ্য ভাণ্ডারে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষের অজানা। বিশেষ করে এ প্রজন্ম জানেই না কত রক্ত, কত কষ্ট, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অর্জন ও উন্নয়নে বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে বাঙ্গালি জাতি বিলীন হয়ে যেত! এমনটাই মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানাতে  বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে আসছে।  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।

আজ প্রকাশিত হলো

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭২

৩ নভেম্বর, ১৯৭১
…..’মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল’ প্রবাদটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য পিণ্ডি অধিকর্তাদের বেলায়। কয়েক লক্ষ মানুষকে হত্যা করে, ৯০ লক্ষ লোককে দেশত্যাগী, আরো অসংখ্য গৃহ ভস্মীভূত এবং লুন্ঠন করে হঠাৎ টনক নড়েছে। আজ ইয়াহিয়ার বাদশাহী সিংহাসন টলোমলো, জল্লাদবাহিনীর আর্তনাদে মুখর সমস্ত পাকিস্তানের আকাশ-বাতাস। যারা এসেছিল এদেশকে পদানত করতে, শৃঙ্খল পড়াতে, ধনসম্পদ লুট করতে আজ মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে হত্যাকারী হয়ে উঠেছে হতোদ্যম, গতপ্রাণ। জল্লাদবাহিনীর মনেও আজ ভয়, সন্ত্রাস দানা বেঁধে উঠেছে। মুক্তিবাহিনীর নাম শুনলে তিনবার ইষ্টদেবতার নাম স্মরণ করে।

এখন উপায়? উপায় খুঁজে বের করেছে বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণিত নায়ক, বুদ্ধিবিবেক সেনাপতি ইয়াহিয়া খান। খবরের কাগজে প্রকাশিত হলো বিবৃতি, সর্ব অসত্যের ভাণ্ডার রেডিও পাকিস্তান থেকে ক্ষণে ক্ষণে প্রচারিত হলো সেই সব মানুষের উদ্দেশ্যে আবেদন, যারা ঘর ছেড়েছে অত্যাচারের জ্বালায় জর্জরিত হয়ে, গৃহহীন আশ্রয়হীন সংসারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, একটু আশ্রয় একটু নিরাপত্তার অভিপ্রায়ে। দরদ বিগলিত কন্ঠে পরম বন্ধুর মতো আহবান এলো – ‘আয়, ওরে আয় ঘর ছেড়ে যারা গেছিস তারা আয়। তোদের সব আছে, তোদের সব দেবো। কিন্তু বাংলার মানুষ দুর্জনের আশ্বাসে ভুলল না। কেননা তারা জানে, খলের ছলের অভাব হয় না।একবার তারা আঘাত পেয়েছে, বহু কষ্টে বুকের পাথর চাপা দিয়ে ভুলে আছে মা বোন ভাই আত্মীয় স্বজনের হত্যার কাহিনী। তারা চায় না আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক।

ইয়াহিয়ার তাঁবেদাররা বলল, ‘সংবর্ধনা শিবিরগুলি ফেরত উদ্বাস্তুদের দ্বারা ভরে গেছে।’ সঙ্গে সঙ্গে ইংল্যাণ্ডের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হলো, ‘সংবর্ধনা সভায় একটি লোকও দেখলাম না। দুর্জনদের মিথ্যা উক্তির প্রমাণটি লক্ষ্য করুন।
যারা মানুষকে ঘরছাড়া করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে, বাঙালীকে হত্যা করে সংখ্যাসমতা আনতে চাইছে- তাদের কোন আশ্বাস কি সংগ্রামী মানুষ সুস্থ মানুষের উক্তি বলে গ্রহণ করতে পারে?…..

শুধু এই নয়, আরো আছে। ইয়াহিয়া নির্বাচনের দিন ও তারিখ ঘোষণা করেছে। ভাবখানা এই, ‘নিজের মুরগী যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে কাটব’। কিন্তু সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার, ভাগ্য, ধ্যান ধারণা তো সস্তা বা মূল্যহীন নয়। ইয়াহিয়া খান অনুভব করেছে এতদিনে।

(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ১০০) চলবে।

আগের পর্ব সমূহ :

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭০

সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা

Loading


শিরোনাম বিএনএ