বিএনএ, চট্টগ্রাম: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী মাস থেকে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের নিয়ে গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সাদার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, চুয়েটের অধ্যাপক, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের পরিচালক, এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণে নগরীর অভ্যন্তরে বা মূল শহরে মাটির নিচে এবং শহরের আশপাশে মাটির উপরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে।
বৈঠকে কীভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, প্রকল্পে কী কী চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, কোথায় কোথায় রুট থাকবে- এসব নিয়ে কোরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা হয়েছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)- এই তিন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আগামী মাসে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, মেট্রোরেল চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। মেট্রোরেল হলে নগরীর অভ্যন্তরে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
গত ৩১ জানুয়ারি নগরীর তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজের উদ্বোধন করেন সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেসময় জানানো হয়, তিন উদ্দেশ্য নিয়ে বাস্তবায়িত হবে মেট্রোরেলের সম্ভাব্যতা যাচাই।
এর মধ্যে প্রথমটি হলো- চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য একটি পরিবহন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা। দ্বিতীয়টি হলো- পরিবেশবান্ধব নগর মেট্রো ব্যবস্থা নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রামে যানজট কমিয়ে পরিবেশগত মান উন্নয়ন ও চট্টগ্রামের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। তৃতীয়টি হলো- সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
নগরীর কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর, সিটি গেট থেকে নতুন ব্রিজ এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গিবাজার- এই তিনটি রুটকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে। তিনটি রুটের ৫৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রী ওঠানামার জন্য মোট ৪৭টি পয়েন্ট থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। সরকার ও কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার অর্থায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত। তবে আগামী মাসে কাজ শুরু হলে শেষ করতে ৩-৪ মাসের বেশি লাগবে না।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর একনেকে অনুমোদন পায় ‘ট্রান্সপোর্ট মাস্টারপ্ল্যান এন্ড প্রিলিমিনারি ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর আরবান মেট্রোরেল ট্রানজিট কনস্ট্রাকশন অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন এরিয়া’ শীর্ষক প্রকল্পটি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৭০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) ১৩ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার এবং কোরিয়ান সংস্থা কোইকা ৫৭ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে।
বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম/হাসনা