বিশ্ব ডেস্ক: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ঝুঁকিতে ব্যবসায়ীরা ছাড় দেওয়ায় তেলের দাম ৩%-এর বেশি কমেছে। অপরিশোধিত তেলের দাম বুধবার ৩% এরও বেশি কমেছে কারণ বাজার ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে বিস্তৃত যুদ্ধের ঝুঁকি প্রশমিত হয়েছে যা সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে। সূত্র: সিএনবিসি।
ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট(WTI Crude)
মে ডেলিভারির চুক্তি ২.৬৭ ডলার বা ৩.১৩% কমে ব্যারেল প্রতি ৮২.৬৯ ডলারে এ স্থির হয়। জুন ব্রেন্ট
এদিকে জ্বালানি তেলের বাজার মনিটরিং সংস্থাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশ ইরান-ইসরাইল সংঘাতের কারণে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইরান-ইসরায়েল বিরোধে সরাসরি অংশ নিতে চায় না।
১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা দেয়ার প্রতিবাদে সে সময়ের সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আজিজ এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আনোয়ার আল-সাদাত পশ্চিমা দেশে তেল রফতানি বন্ধ করে দিয়ে ছিলেন। এতে তখন বিশ্ব বাজারে তেলের দাম এত বেড়ে গিয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মারাত্বক প্রভাবে ফেলেছিল।
ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের আগ্রাসনের ইতিহাস পুরনো হলেও গত বছর অক্টোবরে ইসরাইলের মাটিতে হামাসের অতর্কিত হামলা এই দুই ভূখণ্ডের সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই সংঘাতের জের ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের গণহত্যা চলার মধ্যেই ইরানের সঙ্গে আবার দ্বন্দ্বে জড়ালো ইহুদি রাষ্ট্রটি।
মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো দ্বন্দ্বের সরাসরি প্রভাব পড়ে জ্বালানি তেলের ওপর, যা ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে বেশ ভালোভাবে টের পেয়েছিল ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্র দেশসমূহ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান-ইসরাইল সংঘাতের কারণে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এতে করে তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি তেলের বাজার কেমন হবে এবং আদৌ তেলের দাম বাড়বে কিনা সেটি অনেকাংশে নির্ভর করছে ইরানের ড্রোন হামলার পর ইসরাইল কী জবাব দেয় সেটির ওপর। ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ ইরান। যদি ইরানের ওপর আঘাত আসে তাহলে তেল সরবরাহে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি হবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে তেলের বাজারে।
বিশেষ করে ইরান ও ওমানের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া হরমুজ প্রণালী যেটি বিশ্বের তেল সরবরাহের প্রধান রুটের মধ্যে অন্যতম সেটি ক্ষতির সম্মুখীন হলে জ্বালানি তেলের বাজার বড় রকমের ধাক্কা খাবে।
বিবিসি জানায়, ওপেক সদস্য সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাকের সিংহভাগ তেলের সরবরাহ রুট এই হরমুজ প্রণালী। বিশ্ব বাজারে তেল সরবরাহের ২০ শতাংশ এ প্রণালী মারফত হয়ে থাকে। হরমুজ প্রণালী আক্রান্ত হলে জ্বালানি তেলের বাজারে বড় রকমের সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যদি কোনো কারণে হরমুজ প্রণালী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাতে করে তেলের দাম বেড়ে ১২০-১৩০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
২০০৮ সালের জুলাই মাসের পর রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে বড় রকমের জ্বালানি সংকটে পড়ে পশ্চিমারা। রুশ পশ্চিমাদের পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার জোরে ২০২২ সালের মার্চের শুরুতে জ্বালানি তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৪০ ডলার কাছাকাছি উঠে যায়। এতে করে পশ্চিমা বিশ্বে যে মূল্যস্ফীতির ধকল গেছে যার ফলাফল এখন অবধি তাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুসারে, মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে ২০২২ সালের মার্চ মাসের ১৭ তারিখ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভকে মোট ১১ বার সুদের হার বাড়াতে হয়েছে। মূলত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধকলই যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
বিএ নএ,এসজিএন