।। বাবর মুনাফ ।।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিন অর্থাৎ ৫ আগষ্ট থেকে ছাত্র-জনতার লক্ষ্যবস্তু ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল বা মূর্তি এবং আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের বিভিন্ন স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা। আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের আইকন আখ্যা দিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি, যা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘর। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার অসংখ্য ভাস্কর্য ও মুরাল।
এই ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও প্রশাসনিক সহযোগীতাও পেয়েছে কথিত ছাত্র-জনতা। শুধু শেখ মুজিবের মূর্তি ভেঙ্গে ক্ষান্ত হয়নি, পরিবর্তন করা হয়েছে শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অর্ধশতাধিক স্থাপনার নাম। যদিও এখনো দেশের সবক’টি নোট ও স্মারক মুদ্রায় শোভা পাচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ১৯ মার্চ বাজারে নতুন নোট ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৫, ২০ ও ৫০ টাকার এসব নতুন নোটেও থাকছে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। ছোট এসব নোটের পাশাপাশি বাজারে ছাড়া ১০০, ২০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোটও বিদ্যমান ডিজাইনের বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরনো ডিজাইনের নতুন নোট বাজারে ছাড়া নিয়ে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সবার আগে ৫০০ ও ১০০০ হাজার টাকার নোট বাতিল ঘোষণার প্রয়োজন ছিল। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাসহ সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকার নোট কাগজে রূপান্তর হতো। তখন নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়া যেত। এর মাধ্যমে নোট থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিও বাদ পড়ত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি না করে গণ-অভ্যুত্থানের সাত মাস পর বাজারে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিযুক্ত নতুন নোট বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেখ হাসিনার টানা দেড় দশকের শাসনামলে দেশের সবক’টি মুদ্রার মধ্যেই তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি প্রতিস্থাপন করেছেন। এ মুহূর্তে বাজারে প্রচলিত থাকা ১ টাকার কয়েন থেকে শুরু করে প্রতিটি কয়েন ও কাগুজে নোটে শেখ মুজিবের ছবি রয়েছে। কয়েন ও নোটের পাশাপাশি বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যু করা প্রায় সবক’টি ‘স্মারক মুদ্রায়’ও স্থান পেয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। বর্তমানে দেশে ১৫টির বেশি সোনা ও রুপার স্মারক মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে এ মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ ছাপানো নোট রয়েছে। ছাপানো এ নোটগুলো বাতিল করলে বিপুল অংকের অর্থের অপচয় হবে। এ অপচয় রোধ করতে ছাপানো নোটগুলোই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজারে ছাড়া হবে। ধীরে ধীরে বাজার থেকে পুরনো নোট তুলে নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যুকৃত নোট ছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকার। এর মধ্যে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকাই ছিল ব্যাংক খাতের বাহিরে। ব্যাংকে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ ছিল মাত্র ২৪ হাজার ৩১৭ কোটি । কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যুকৃত নোটের বড় অংশই অপ্রদর্শিত বা কালো টাকায় রূপান্তর হয়ে ‘সিন্দুকে’ আটকা পড়েছে বলে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসছেন।
দেশের অর্থনীতির চাহিদার নিরিখে মুদ্রা ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার। বাংলাদেশে সরকারি মুদ্রা হলো ১, ২ ও ৫ টাকার নোট ও কয়েন। সরকারের ইস্যুকৃত এ ধরনের মুদ্রা রয়েছে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকার। তবে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে সরকারি মুদ্রা এরই মধ্যে বাজারে উপযোগিতা হারিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইস্যুকৃত ও গভর্নরের স্বাক্ষরযুক্ত ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট ‘ব্যাংক নোট’ হিসেবে পরিচিত।
‘এ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট রয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত এসব নোট পর্যায়ক্রমে বাজারে ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে আগামী কয়েক বছরের চেষ্টায়ও বাজার থেকে পুরনো নোট তুলে আনা সম্ভব হবে না। কারণ বেশিরভাগ বড় নোট দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও আমলাদের ঘরে আটকা পড়েছে। এজন্য ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপের দিকেই হাঁটতে হতে পারে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিস্ট সূত্রের বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছে দৈনিক ‘বণিক বার্তা’
বিএনএ নিউজ টুয়েন্টিফোর/ শাম্মী