বিএনএ,ঢাকা:খাদ্যে ভেজালকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সেইসঙ্গে অনলাইনে বিতরণ করা খাদ্যসামগ্রীর দিকেও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার(১৮ ফেব্রুয়ারি)জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন,সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।এবার জোর দিচ্ছে,পুষ্টিকর খাবারের ওপর।দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্যও নিশ্চিত করতে হবে।দারিদ্র্যতা কমিয়ে এনে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার কাজ করছে।অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহার করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে।এখন মানুষের সামর্থ্য বেড়েছে।মানুষ এখন ভাতের পাশাপাশি কিছু আমিষও কেনে।এজন্য সুষম খাবারের প্রচার বাড়াতে হবে।জনগণকে জানাতে হবে যে শিশুরা কী খাবে, বৃদ্ধরা কী খাবে আর একজন গর্ভধারিণী মা কখন কী খাবে।খাদ্য নিরাপদ করতে সচেতনতার পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরির পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় ফুড টেস্টিং ল্যাব তৈরির তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,সারাদেশে একশ ইকোনমিক জোন করেছে সরকার।সেখানে অনেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ,রফতানি করবে। তাদের সার্টিফিকেট লাগবে।সেজন্য প্রতি বিভাগে অন্তত একটা ল্যাব প্রয়োজন।খাদ্যের মান পরীক্ষায় ফুডটেস্টিং ল্যাবরেটরির সুবিধা রাজধানী ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি বয়স্ক, শিশু ও গর্ভবতী নারীরা পুষ্টির জন্যে কিভাবে এই সুষম খাবার গ্রহণ করবে সে বিষয়ে তাদের সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের হোটেল-রেস্তারাঁ গ্রেডিং সিস্টেমের প্রশংসা করে সরকার প্রধান বলেন,এটি খুব ভালো উদ্যেগ।এমন গ্রেডিং সারাদেশে চালু করতে হবে।খাদ্য নিরাপদ করতে যা প্রয়োজন ব্যবস্থা নিলে প্রয়োজনে যথার্থ অর্থ এ খাতে বরাদ্দ দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
খাদ্য উৎপাদনে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের সুফল মিলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদনে সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের সুফল দেশ পাচ্ছে।প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের নিরাপদ পরিবহনে ডাক বিভাগকে কাজে লাগানোরও পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার নিরাপদ খাদ্য দিবসের আলোচনায় পুষ্টি ও নিরাপদ খাবার নিশ্চিতে নানা নির্দেশনা দেন সরকার প্রধান।নিরাপদ খাদ্য দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল আয়োজন হয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। এতে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম সর্বসাধারণকে অবহিতকরণ এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বিষয়ে সর্বস্তরে জনসচেতন বৃদ্ধিই এ দিবসের প্রধান লক্ষ্য।
ভেজাল খাদ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি
আমেরিকার এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সির প্রতিবেদনে প্রকাশ, ফরমালিন ফুসফুস ও গলবিল এলাকায় ক্যান্সার সৃষ্টি করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গলবিল এলাকায় ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য ফরমালিনকে দায়ী করে। টেক্সটাইল কালারগুলো খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশের পর এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যার ক্ষতি করে না। তবে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান ক্ষতিগুলো হয় আমাদের লিভার, কিডনি, হৃৎপি- ও অস্থিমজ্জার। ধীরে ধীরে এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চা ও বৃদ্ধদের বেলায় নষ্ট হয় তাড়াতাড়ি, তরুণদের কিছুটা দেরিতে। ভেজাল খাদ্যের কারণে আয়ু কমে যায়।
খাদ্যপণ্য ভেজালের কারণেই দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি এগুলো অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রোগীদের লম্বা লাইন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ‘বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা দেশে প্রায় ১৫ লাখ। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থ্যা সমূহকে যে কোনো মূল্যে আরো শক্তিশালী ও বেগবান হতে হবে মত বিশেষজ্ঞদের।
বিএনএনিউজ/আরকেসি