25 C
আবহাওয়া
১০:০৩ পূর্বাহ্ণ - মার্চ ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দেশের বাজারে কদর নেই ভারতীয় পেঁয়াজের

দেশের বাজারে কদর নেই ভারতীয় পেঁয়াজের

দেশের বাজারে কদর নেই ভারতীয় পেঁয়াজের

বিএনএ, ঢাকা : একসময় যে ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীলতা ছিল দেশের বাজার পরিস্থিতি। সে অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারা। যার ফলশ্রুতিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের স্থল বন্দরগুলোতে আমদানিকারকরা ভারতীয় পেঁয়াজ আনা বন্ধ রেখেছেন।

হিলি, বেনাপোল এবং ভোমরা স্থল বন্দরে যোগাযোগ করে এই তথ্য জানা গেছে। গত আট দিন ধরে কোন পেঁয়াজ আনেনই এসব স্থল বন্দরের আমদানিকারকেরা।

কেন ভারতীয় পেঁয়াজ আনা হঠাৎ বন্ধ

হিলি বন্দর আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতি জানিয়েছে, এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে গড়ে প্রতিদিন ২০০ ট্রাকে করে ৪,০০০ মেট্রিক টনের মতো পেঁয়াজ আসে।

সমিতির সভাপতি মো. হারুন উর রশিদ জানিয়েছেন, “এবার দেশি পেঁয়াজ ভারতীয় পেঁয়াজের থেকে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের পড়তা হচ্ছে না। ভারতের ভেতরেও পেঁয়াজের দাম অনেক বেশি, বাংলাদেশে সেই তুলনায় কম। গত কিছুদিনে পেঁয়াজের একটা গাড়িও ঢোকেনি।”

ঢাকার বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০ টাকার মতো। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে ১০ টাকা বেশি দামে।

এছাড়া ইদানীং টিসিবি পেঁয়াজ বলে এক ধরনের নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আরও কম দামে, ১৬ থেকে ১৮ টাকায়।

ঢাকায় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ৎ শ্যামবাজারে অবস্থিত।

সেখানকার একজন কমিশনিং এজেন্ট মাহবুবুর রহমান বলছেন, “সরকারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ অনেক কম দামে পেঁয়াজ দিচ্ছে। টিসিবির হাতে অনেক মাল আছে। ইম্পোর্টেড পেঁয়াজ এমনিতেই কেউ খাচ্ছে না। যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটা টিসিবি’র। চীন, নেদারল্যান্ডেরও কিছু ইম্পোর্টেড পেঁয়াজ আছে। সেটাও ভারতীয় পেঁয়াজের থেকে কম দামে বিক্রি হচ্ছে।”

বেনাপোলের আমদানিকারক মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, “দেশি পেঁয়াজ সবসময় জনপ্রিয় কারণ ভারতীয় পেঁয়াজে ঝাঁঝ কম। সাধারণত দেশি পেঁয়াজেরই দাম বেশি থাকে। কিন্তু এবছর উল্টো। যেহেতু দেশিটাই কম দামে কেনা যাচ্ছে তাই ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কম রয়েছে।”

বেনাপোল হয়ে প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০ ট্রাকের মতো পেঁয়াজ আসে বলে জানিয়েছেন তিনি।

দেশি পেঁয়াজ ফলনও এবছর ভাল হয়েছে। মোঃ রফিকুল ইসলাম বলছেন, “আমরা সরেজমিনে দেখছি যেখানে ধান চাষ হতো সেখানে বহু মানুষ ধানের বদলে এবার ক্ষেতে পেঁয়াজ লাগিয়েছে।”

আমদানিতে শুল্ক

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। আভ্যন্তরীণ বাজারের উপরে নির্ভর করে প্রায়শই এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে আবার পেঁয়াজ রপ্তানির ঘোষণা দেয় ভারত এবং এই মাসের শুরুর দিকে আবার আমদানি শুরু হলেই দিন দশেক পরই আনা বন্ধ করে দেন আমদানিকারকেরা।

এই মাসের প্রথম সপ্তাহেই পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ৫% থেকে বাড়িয়ে ১০% শুল্ক আরোপ করে বাংলাদেশের সরকার।

কমিশনিং এজেন্ট মাহবুবুর রহমান বলছেন, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে ভারতে আভ্যন্তরীণ বাজারেও এবার পেঁয়াজের দাম বেশি।

শুল্ক আরোপে দেশিয় পেঁয়াজ চাষিদের লাভ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলছেন, “বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত পেঁয়াজ আনতে খরচ পড়ছে ভারতীয় ৩০ রুপির মতো। এরপর ডলারে কনভার্ট করে, শুল্ক দিয়ে, বাংলাদেশ অংশে প্রবেশের পর পরিবহনসহ দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে।”

সরকারের বর্ধিত শুল্ক আরোপের কারণেও আমদানি কম হচ্ছে বলে মনে করেন বেনাপোলের আমদানিকারক মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলছেন, “দেশি পেঁয়াজ এমনিতেই এই সিজনের পর অর্থাৎ তিন চার মাস পর কমে যাবে। দেশি কৃষকের সুবিধার জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হলেও শুল্ক উঠে গেলে তখন আবার ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৪ টাকার মতো কমে যাবে।”

ফেসবুকে ভারতীয় পেঁয়াজ বন্ধের ডাক

‘ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হলে বাংলাদেশিদের পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে’। বহু বছর ধরে এরকম একটি ধারণা প্রচলিত ছিল।

কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় পেঁয়াজের বিপক্ষে বাংলাদেশিদের এক ধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

ভারত আবারও পেঁয়াজ রপ্তানি করতে যাচ্ছে এমন খবর প্রকাশের পরই ভারতীয় পেঁয়াজ বয়কটের ডাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ চালু হয়ে যায়।

ফেসবুকে সার্চ দিলেই দেখা যাচ্ছে #boycottindianonion এবং ‘ #ভারতীয়_পেয়াজ_বর্জন_করি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অনেকেই পোষ্ট দিয়েছেন। তাতে নানা রকম বক্তব্য রয়েছে।

যেমন একজন লিখেছেন, “দেশি কৃষকদের বাঁচান, ভারতীয় পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করুন।”

আর একজনের পোষ্টে লেখা, “পেঁয়াজের ঘাটতির সময় দাদাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

ভারত বিদ্বেষী মনোভাবের কারণে সেখানকার পেঁয়াজ না খাওয়ার আহবান দিয়ে অনেকেই পোষ্ট করেছেন। (বিবিসি)

 

বিএনএনিউজ/এইচ.এম।

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ