।।ইয়াসীন হীরা।।
ইয়াবা ডন সিআইপি সাইফুল করিমের উঠাবসা ছিল রাজনৈতিক দলের নেতা, পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা ও কতিপয় অসাধু এলিট সাংবাদিকদের সঙ্গে। ২০১৮ সালের ৩ মে রাতে চট্টগ্রামের শ্যামলী আবাসিক এলাকায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় যুক্ত আশরাফ ও রাশেদ মুন্না পুলিশের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারায় এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। এতে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইপি সাইফুল করিমের নাম প্রকাশ পায়।
২০১৮ সালে কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১ হাজার ১৫১ জন মাদক পাচারকারীর তালিকা করে। তালিকার ২ নম্বরে ওঠে তার নাম। আর সেই তালিকা ধরেই সারাদেশে জোরালো অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রথমে আত্মগোপনে, পরে দুবাই চলে যান সাইফুল। পরবর্তীতে দুবাই থেকে মিয়ানমার যান।
আত্মসমর্পণ করতেই দেশে আসেন সাইফুল!
টেকনাফ থানার সাবেক ওসি (বর্তমানে কারাগারে কনডম সেলে আটক মেজর অব: সিনহা খুন মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ) প্রদীপ দাশ এলোপাতাড়ি ক্রস ফায়ার শুরু করে। ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির উপস্থিতিতে প্রথম দফায় ১০২ ইয়াবা কারবারির আত্মসমর্পণের সময় সাইফুল করিমের আত্মসমর্পণের বিষয়টিও জোরালো হয়ে উঠেছিল। কিন্তু প্রশাসনের সদিচ্ছা না থাকায় আত্মসমর্পণ করেননি সাইফুল করিম।
পরবর্তীতে পুলিশ সাইফুল করিমকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালায়। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসাবে তার দুই সাংবাদিকও আটক করা হয়। এক পর্যায়ে সে দেশে ফিরতে রাজি হয়। পুলিশের শীর্ষ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেয়া হয় দেশে ফিরে এলে তাকে সেইফ হোমে রাখা হবে। তার ভিত্তিতে ২০১৯ সালের ২৫ মে রাত ১১টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে (বিজি-০০৬১) মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে ঢাকায় ফিরেন সাইফুল করিম। বিমানবন্দর থেকে তাকে হেফাজতে নিয়ে নেয় পুলিশ। তার বোর্ডিং পাসে লেখা ছিল করিম সাইফুল। রেফারেন্স নাম্বার-৯৯৭২১০৩৫৩১৮০৫ সি১।
কিন্তু পুলিশ দাবি করেছিল সাইফুল করিম (৪৫) কে ২০১৯ সালের ৩১ মে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন রাত ১ টার দিকে ইয়াবা উদ্ধারে গিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানা এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে তিনি মারা গেছেন।
ওসি প্রদীপের বয়ানে সাইফুলের মৃত্যু
টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ইয়াবা ডন সিআইপি সাইফুলের মৃত্যু প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বলেছিলেন, সাইফুল জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, গত কয়েক দিন পূর্বে ইয়াবার একটি বড় চালান ইঞ্জিনচালিত বোটযোগে মিয়ানমার থেকে এনে টেকনাফ স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষপ্রান্তে নাফনদীর পাড়ে মজুত করা হয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে ইয়াবা উদ্ধারের জন্য ৩১ মে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সাইফুলকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার অপরাপর সহযোগী অস্ত্রধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। এতে ঘটনাস্থলে এসআই রাসেল আহমেদ, কনস্টেবল ইমাম হোসেন, সোলেমান আহত হন।
সাবেক ওসি প্রদীপ দাশ আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমার নির্দেশে নিজেদের জীবন ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে পুলিশ ৫২ রাউন্ড গুলি করে। একপর্যায়ে আটক সাইফুল গুলিবিদ্ধ হয়। গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে পুলিশ গুলি করা বন্ধ করে। অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করতে করতে দ্রুত পালিয়ে যায়।
গুলিবিদ্ধ ইয়াবা ডন সাইফুল করিম ও আহত পুলিশ সদস্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুলকে মৃত ঘোষণা করেন।
আগের পর্ব :
সিআইপি সাইফুল ও বাংলাদেশে ইয়াবার আগমন! পর্ব-৫
টেকনাফের ৮০ শতাংশ মানুষ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত! পর্ব-৪
টেকনাফের অর্ধশত রুটে আসে ইয়াবা!- পর্ব- ৩
মডেল-নায়িকা-শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা কেন সেবন করে ইয়াবা? পর্ব-২
‘ইয়াবা’ কেন জনপ্রিয় মাদক? পর্ব-১
বিএনএনিউজ২৪,জিএন