বিএনএ, সাতকানিয়া : চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় পান থেকে চুন খসলেই খুনের ঘটনা ঘটছে। তুচ্ছ ঘটনায় এবং স্থানীয় আধিপত্য দ্বন্দ্বে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে। দেখা গেছে, গত দেড় মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত সোমবার (১৫ জুলাই) রাতে এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব খুনের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা বাড়ছে। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক খুনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে সাতকানিয়ার পুরানগড় ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের জানু সিকদার বাড়ি এলাকায় মোহাম্মদ মোক্তার (৬০) নামের এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় কাজী জেয়াবুল হোসেন নামের আরও একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জমিজমার বিরোধে স্থানীয় প্রতিপক্ষ খুনের এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত মোক্তার ওই এলাকার মৃত আহমদ হোসেনের পুত্র।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোক্তারের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল প্রতিবেশী ভুট্টো ও ফরিদের সঙ্গে। এর জের ধরেই প্রতিপক্ষ দা দিয়ে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেধড়ক কুপিয়ে জখম করে মোক্তারকে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত মোক্তারকে তার স্বজনসহ স্থানীয়রা দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মোক্তার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় গ্রামপুলিশ রফিক ও হারুন।
পুরানগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম সিকদার বলেন, মোক্তার খুবই সহজ সরল ও সোজাসাপটা মানুষ হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত।
এর আগে ১৩ জুলাই রাতে উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের বিওসির মোড়ে ছুরিকাঘাতে খুন হন ইব্রাহিম খলিল (৪০) নামের এক যুবক।
ইব্রাহিম খলিল পার্বত্য জেলা বান্দরবানের লামার ছমুর মুখ এলাকার মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশের মৌলভীর দোকানসহ আশপাশের এলাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন।
গত ৯ জুন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতীপাড়া এলাকার ফজল করিম মেম্বারের গরুর ফার্মের পূর্ব পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফজল আহমদ (৫৫) নামের এক কৃষককে। তিনি সোনাকানিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুব পাড়ার সাচি মিয়ার পুত্র। ঘটনার পর হত্যাকারী সন্দেহে আবুল কাশেম (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ছাড়া গত ২৯ মে রাত ৮টার দিকে সাতকানিয়ার আমিলাইশ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ আমিলাইশে ধান চোর সন্দেহে কয়েক দফা পিটিয়ে সদ্যবিবাহিত এক পিকআপ চালককে হত্যা করা হয়। মো. মহিউদ্দিন (২৫) নামের ওই পিকআপ চালককে গাড়িসহ আটক করে কয়েক দফা পেটানোর পর তিনি মারা যান।
গত ২৮ মে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নে মাহমুদুল হক (৩৩) নামের একজনকে পেটে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়। নিহত মাহমুদুল গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
নৃশংস খুনের এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের আট সদস্য। এর মধ্যে গত ৮ জুলাই মাহমুদুল হক হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত সাকিব প্রকাশ টোকাই সাকিবকে গ্রেফতার করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে খুনোখুনির ঘটনার বিষয়ে কথা হয় সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউল হক চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, যে কোনো অপরাধ দমনে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে থাকে পুলিশ। সম্প্রতি যে খুনের ঘটনাগুলো ঘটেছে সবগুলোর তদন্ত চলছে।
এসব খুনের ঘটনায় স্থানীয়রা মনে করছেন, অপরাধ ঘটিয়ে সহজেই পালিয়ে যাওয়া যাবে-এমন ধারণা থেকেই অপরাধীরা এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। এলাকাবাসী ও নিহতদের স্বজনদের দাবি পুলিশি টহল বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসীদের নতুন তালিকা করে আটকের মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কমে আসবে।
এসব বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) মো. শিবলী নোমান বলেন, অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড জমিজমা বিরোধ নিয়ে হচ্ছে। আমরা এজন্য নিয়মিত বিট পুলিশের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। জমিজমার বিষয়গুলো আদালতের মাধ্যমে সমাধান করার কথা বলেছি। সেই সাথে হত্যকাণ্ডের সাথে জড়িতদের সাথে সাথে আটক করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
বিএনএনিউজ/নাবিদ/এইচ.এম/ হাসনা