বিএনএ, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিক ও পুলিশ সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছে। শনিবার ( ১৭ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনায় এ ঘটনা ঘটে। এতে আরও পুলিশসহ ৫০ শ্রমিক আহত হয়েছে।তারমধ্যে ৩ পুলিশ ও ১৫ শ্রমিককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।অন্যদের উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
নিহতরা হলেন- আহমেদ রেজা মীরহান (১৮), রনি হোসেন (২২), শুভ (২৪), মো. রাহাত (২৪)।প্রথম ৪ জন নিহত হয় ঘটনাস্থল বাঁশখালীতে। দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে হাবিবুল্লাহ (১৯) নামে আরো একজনকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আহত ১১ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- হাবিব উল্লাহ (২১), মো. রাহাত (৩০), মিজান (২২), মো. মুরাদ (২৫), মো. শাকিল (২৩), মো. কামরুল (২৬), মাসুম আহমদ (২৪), আমিনুল হক (২৫), মো. দিদার (২৩), ওমর (২০) ও অভি (২২) এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
আশেপাশের অন্তত : ১০ হাজারের বেশি মানুষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঘেরাও করে রেখেছে। এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকরা জানায়, চীন এবং এসআলম গ্রুপের যৌথভাবে গন্ডামারায় নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কর্মরত শ্রমিকরা ১০ দফা দাবি পেশ করে। দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে, রমজানে দুপুরের বিরতি বাদ দিয়ে টানা দৈনিক ৮ ঘন্টা ডিউটি, শুক্রবারে জুমার দিন আধা বেলা হাজিরায় পুরো বেতন, বিনা নোটিশে ছাঁটাই বন্ধ, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবস্থ্যা।
এসব দাবি আদায়ের জন্য গত তিন দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে। এ সব দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে কর্তৃপক্ষ তাদের দাবিকে অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবির্তক হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা বিদ্যুৎ ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়।
বাঁশখালী থানার ওসি (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আগুন ধরিয়ে দেন। সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। এসময় অন্তত ২৫ জন আহত হয়। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৪টি মরদেহ বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. জহিরুল হক বলেন, বাঁশখালীর বিদ্যুৎকেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৬ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে। ওই সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত : ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে দুই ভাইসহ চারজন নিহত হয়েছিল। এ ঘটনায় আহত হয়েছিল ১১ পুলিশসহ অন্তত ১৯ জন। সেখানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল স্থানীয়দের একটি পক্ষ। ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছিল।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথ উদ্যোগে ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে। ওই বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ ভবনে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছিল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য গণ্ডামারা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমি কেনা হয়েছে।
এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানা থাকবে এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের। অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে সেপকো ২০ শতাংশ এবং চীনের অপর প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশের মালিক হবে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও উৎপাদনে যেতে পারেনি তারা।
বিএনএনিউজ/আমিন, এসজিএন