ভাষাসৈনিক মাওলানা আহমেদুর রহমান আজমী ২ নভেম্বর, ১৯২৮ সালে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের দেওখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা গোলাম রহমান ছিলেন খ্যাতিমান আলেম। আহমেদুর রহমান সাহেবদী নগর প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে মিঠাছড়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন।
বাল্যকালেই আহমেদুর রহমান আজমীর মনোগহনে রাজনীতিরি বীজ রোপিত হয়। ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল বাম রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন সারাজীবন। এক ব্যতিক্রম ও ঘটনাবহুল বর্ণাঢ্য জীবেনর অধিকারী ছিলেন আহমেদুর রহমান আজমী।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদ্রাসায় অধ্যায়নকালে তিনি ভাষা-আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। প্রথমে তমদ্দুন মজলিসের হয়ে ভাষা-আন্দোলনের পক্ষে কাজ করেন পরে প্রগতিশীল আন্দোলনে জড়িত হন। ক্লাস শেষে হাটহাজারী থেকে প্রতিদিন চলে আসতেন চট্টগ্রাম শহরে। শহরে এসে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য অনুষ্ঠিত নানা সভা-সমাবেশে অংশ নিতেন। রাতের বেলায় পোস্টার লিখতেন এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসে রাত্রিযাপন করতেন। প্রতিদিন সকালে হাটহাজারী যেয়ে মাদ্রাসায় ক্লাস করতেন।
১৯৫২ সালে তিনি ভাষা-আন্দোলনের সক্রিয় ও একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে চট্টগ্রামের সকল কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। তখন তিনি বামপন্থি কর্মী হিসেবে পরিচিত। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক নির্বাচিত হন। চট্টগ্রামের অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভাষা-আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকায় ছাত্র হত্যার খবর চট্টগ্রামে পৌঁছালে চট্টগ্রাম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং প্রতিবাদ সভা ও মিছিল শুরু হয়। প্রতিটি সভা, সমাবেশের আয়োজক এবং সফল বাস্তবায়নে আহমেদুর রহমান আজমী ছিলেন খুবই তৎপর। একুশের আন্দোলন পরবর্তী পর্যায়েও তিনি বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা পালন করেন।
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক(৫) আহমেদ ফজলুল মতিন, ডা.