29 C
আবহাওয়া
৫:৪২ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাংলাদেশে পাকিস্তানের কন্টেইনার জাহাজ, ভারত উদ্বিগ্ন

বাংলাদেশে পাকিস্তানের কন্টেইনার জাহাজ, ভারত উদ্বিগ্ন


বিএনএ ডেস্ক : দুবাইয়ের জিবল আলী থেকে পাকিস্থানের করাচি হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল একটি কন্টেইনার জাহাজ। ৫০ বছরের বেশি সময় পর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজটি কেন এসেছিল? খালাস করা কন্টেইনারে কী ছিল এই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত ১১ই নভেম্বর আসা এই কন্টেইনার জাহাজটির বিষয়টি প্রতিবেশি দেশ ভারত স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে দেখছেন না।

ভারত সরকার এই ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন। দেশটি মনে করছে ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। ভারতের বিভিন্ন গণ মাধ্যম, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসা এই কন্টেইনার জাহাজকে নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে। Concern in India as Pakistan, Bangladesh restore sea ties শিরোনামে দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিম প্রতিবেশীর মধ্যে এই নতুন সংযোগ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলবে।

দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে, চট্টগ্রামে তিন শতাধিক কন্টেইনার নিয়ে আসা কার্গো জাহাজটি নোঙরের সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তিনি বলেছেন, ‘এই নতুন রুটটি সরবরাহ শৃঙ্খলাকে সহজতর করবে, ট্রানজিটের সময় হ্রাস করবে এবং উভয় দেশের জন্য নতুন ব্যবসায়ের সুযোগ উন্মুক্ত করবে।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যকে স্বাগত জানিয়েছে। এতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। ২০২৩ সালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশর বাণিজ্যের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান থেকে কার্গো জাহাজটির বাংলাদেশে আনা পণ্যের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও একাধিক সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বাকি চালানগুলো খালাস করার আগে, প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বড় কন্টেইনার, জাহাজ থেকে নামানো হয়।

‘প্রথমে প্রায় ৪০ ফুট কন্টেইনার নামানো হয় এবং স্থানীয় পুলিশকে দিয়ে সেগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। এটা কোনো স্বাভাবিক নিয়ম নয়। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পণ্য প্রবেশের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সরকারি কোনো সূত্রের কোনো বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি। যদিও দুই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাজ করেছেন এমন একজন বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে দ্য টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানায়, ‘চট্টগ্রাম ও মংলা বাংলাদেশের প্রধান দুই বন্দর। গত পাঁচ দশকে এখানে পাকিস্তান জায়গা পায়নি। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হতো সিঙ্গাপুর ও কলম্বোর মাধ্যমে। চট্টগ্রাম ও মংলা —উভয় বন্দরই পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগের বাইরে রয়েছে। সিঙ্গাপুর বা কলম্বোতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য হতো।’

এর ফলে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পণ্য আসার শঙ্কা প্রকাশ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এখন যেহেতু পাকিস্তানি জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রামে আসবে, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ পণ্য পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’

২০০৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় চট্টগ্রামে অস্ত্র উদ্ধারের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ট্রলারে করে আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল উলফার জন্য ১ হাজার ৫০০ চাইনিজ অস্ত্র পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো উলফার হাতে যাওয়ার আগেই চট্টগ্রামে জব্দ করা হয়।’

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া বলছে, মিয়ানমারে এখন টালমাটাল অবস্থা। ভারতের শঙ্কা মিয়ানমার থেকে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং মাদক কারবারি বেড়ে যেতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, করাচি থেকে যে কন্টেইনার জাহাজটি এসেছে তার নাম YUAN XIANG FA ZHAN. এটি পানামার পতাকাবাহি। তবে কী পণ্য নিয়ে এটি এসেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

২০২৪ সালের তৈরি রহস্যজনক এই জাহাজটির কোন ছবি কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, রহস্যজনক এই জাহাজটির আইএমও নম্বর 1053028, কল সাইন 3E6821, ১৮২ মিটার দৈঘ্য, ৩০ মিটার প্রস্থ, ৯ দশমিক ৯ মিটার ড্রাফটের এই জাহাজটির ডেটওয়েট ৩২ হাজার টন। চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার খালাসের পর ১২ নভেম্বর জাহাজটি ইন্দোনেশিয়ার বেলওয়ান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। শনিবার রাতে YUAN XIANG FA ZHAN নামের এই কন্টেইনার জাহাজটির অবস্থান দেখা গেছে, থাই ইকোনোমিক জোন এলাকায়।

সৈয়দ সাকিব

Loading


শিরোনাম বিএনএ