25 C
আবহাওয়া
৬:১৮ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৯৫(বাগেরহাট-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-৯৫(বাগেরহাট-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বাগেরহাট-১ আসনের হালচাল।

বাগেরহাট-১ আসন 

বাগেরহাট-১ সংসদীয় আসনটি ১৯৮৪ সালের আগে খুলনা-১ নামে পরিচিত ছিল। ফকিরহাট, মোল্লাহাট এবং চিতলমারী উপজেলা নিয়ে গঠিত, এই আসনটি জাতীয় সংসদের ৯৫তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হোসেন বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৫ হাজার ১ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৮ হাজার ৬ শত ৬৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৪৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শেখ মুজিবুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪০ হাজার ১ শত ৫৫ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৯ শত ৮৬ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৬শত ১৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৭ হাজার ৩ শত ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শেখ মুজিবুর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ২ শত ৯৯ ভোট।

উল্লেখ্য থাকে যে, ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এগুলো হচ্ছে বাগেরহাট-১, খুলনা-১, এবং গোপালগঞ্জ-৩। তিনি সব আসনে জয়ী হলেও গোপালগঞ্জ-৩ আসনকে প্রতিনিধিত্ব করার বেছে নেন। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বাগেরহাট ১ আসনের উপ-নির্বাচনে শেখ হেলাল উদ্দিন বিজয়ী হয়।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দিন বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩১ হাজার ২ শত ৬৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১ শত ৫৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬ হাজার ২ শত ৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শেখ মুজিবুর রহমান। ধানের শীষ তিনি পান ৮২ হাজার ৯ শত ২২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১১ হাজার ৪ শত ৬৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪২ হাজার ৯ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শেখ ওয়াহিদুজ্জামান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৫শত ৩৩ ভোট।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগেরহাট-১, রংপুর-৬, এবং গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে তিনি সব আসনে জয়ী হলেও গোপালগঞ্জ-৩ আসনকে প্রতিনিধিত্ব করার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে উপ নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অন্য দুই প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করলে শেখ হেলাল উদ্দীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দীন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন:আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দীন বিজয়ী 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২ হাজার ৩ শত ৩০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮ শত ৪৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দীন, ধানের শীষে বিএনপির শেখ মাসুদ রানা, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের লিয়াকত আলী শেখ ও হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের এম ডি সামশুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ হেলাল উদ্দীন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৫২ হাজার ৬ শত ৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শেখ মাসুদ রানা। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১১ হাজার ৪ শত ৮৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাগেরহাট-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। শুধুমাত্র ১১ দিনের ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বাগেরহাট-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৯.৮১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮.২২%, বিএনপি ৩১.২১%, জাতীয় পার্টি ০.৩৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২০.২৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৭৬%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫১.৩৫%, বিএনপি ৩১.৪০%, জাতীয় পাটি ৩.৯৭ %, জামায়াতে ইসলামী ৫.৬২ %, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৬৬% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮১.৭৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৬.১৬%, ৪দলীয় জোট ৪৩.৮৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৮১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৭.৯৯ %, ৪ দলীয় জোট ২৭.৮৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৪.১৭% ভোট পায়।

বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারী) একাদশ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই হেলাল উদ্দিন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শেখ হেলাল উদ্দিন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ মুজিবর রহমান, বাগেরহাট জেলা বিএনপি নেতা সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মাসুদ রানা এবং বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাগেরহাট-১ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই আসনে দুইটি উপ নির্বাচনসহ ৫বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হেলাল উদ্দিন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি নিজের পারিবারিক ঐতিহ্য ও ইমেজকে কাজ লাগাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এছাড়া টুঙ্গীপাড়ার পাশাপাশি হওয়ায় আওয়ামী লীগ এই আসনে বেশ প্রভাবশালী সংগঠনে রূপ নিয়েছে। দলে দলীয় কোন কোন্দল নেই। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা তেমন মজবুত নয়। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা নেই।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৯৫তম বাগের হাট-১ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগের বিজয় এক প্রকার নিশ্চিত বলা যায়।

বিএনএ/ শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ