বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : ইরানের ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করতে ইসরায়েলের ১০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাবেক এক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিম আমিনোচ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা জানান।
মিডল ইস্ট আই’ কে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে আমিনোচ বলেন, আমরা যদি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বলি; ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র- যা অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ভূপাতিত করা দরকার, সেগুলো আমরা মূলত যুদ্ধবিমান দিয়ে ভূপাতিত করছি। অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য ৩৫ লাখ ডলার, ডেভিডস স্লিংয়ের জন্য ১০ লাখ ডলার, এছাড়া জেট বিমানের জন্যও এ ধরনের খরচ হয়েছে। অর্থাৎ সব খরচ মেলালে ১ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে।
গত পহেলা এপ্রিল সিরিয়ার ইরানিয়ান কনস্যুলেটে হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে তেহরান। এখন প্রশ্ন হলো ইসরায়েল কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে সরাসরি যোগাযোগের কোনো মাধ্যম নেই।
ভবিষ্যতের দিনগুলোতে তারা বিপজ্জনক যে কোনো সিদ্ধান্ত এড়াতে সক্ষম হবে কিনা সেটাও এখন সবচেয়ে বড় আশঙ্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার সম্ভাব্য পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের চার মার্কিন মিত্র সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কুয়েত। দেশগুলো জানিয়েছে, তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ইরানের ওপর কোনো প্রকার হামলা চালাতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে আরেক আরব রাষ্ট্র জর্ডান খোদ ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে মাঠে নেমেছে।
ইরানের হামলা মোকাবিলায় এরইমধ্যে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। পাশাপাশি ইসরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানি। অন্যদিকে, ইসরায়েলে ইরানের হামলার পর সৌদি আরব সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অঞ্চলে ‘সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ‘যুদ্ধের বিপদ’ এড়াতে সব পক্ষকে সংযমের এই আহ্বান জানায়।
তেহরানের এমন হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরমাণু পরাশক্তি চীন। বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, চীন চলমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বৃহৎ আকারে সংঘাত প্রতিরোধ করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে শান্ত ও সংযমী আচরণ করার আহ্বান জানায়।
এ দিকে ইরানের এ হামলার জবাবে পাল্টা হামলা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি তেলআবিব। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, ইরান ও ইসরায়েলের চরম উত্তেজনার মধ্যে তেল আবিবের প্রতি ইস্পাতদৃঢ় সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিলেও ইরানে পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেবে না মার্কিন বাহিনী। এমনকি এই ইসরায়েলি হামলায় তারা সমর্থন পর্যন্ত দেবেন না। রোববার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে মার্কিন নিউজ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওস।
এ দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সব পক্ষকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধের ভার বহন করতে পারবে না।’ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফ্রন্টে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের কারণ হতে পারে-এমন যেকোনো পদক্ষেপ এড়াতে সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বানও জানিয়েছেন গুতেরেস।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, মধ্যপ্রাচ্য,ব্যাপী বিধ্বংসী উত্তেজনার প্রকৃত বিপদ সম্পর্কে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। তারা এমন কোনো পদক্ষেপ যেন না নেয়, যা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ফ্রন্টে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের কারণ হতে পারে। আমি বারবার জোর দিয়ে বলেছি, এই অঞ্চল বা বিশ্ব আরেকটি যুদ্ধের ভার বহন করতে পারবে না।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি