বিএনএ ডেস্ক: বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) ২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে লেনদেন হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে এই লেনদেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জানুয়ারিতে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করে।
এর আগে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল গত বছরের জুনে। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; নভেম্বরে হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত অক্টোবরে দেশে মোবাইল ফোনে এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়। তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে মোবাইল ফোনে লেনদেন হয় এক লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগস্টে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত জুনে মোবাইলের মাধ্যমে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। ওই মাসে দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছিল ৪ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে এখন পর্যন্ত তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে গত বছরের এপ্রিলে, এক লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) মোবাইলে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে লাখ কোটি টাকার নিচে, ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে চারগুণের বেশি।
লেনদেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গ্রাহক সংখ্যা। পাঁচ বছর আগে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮ জন। এ বছরের জানুয়ারিতে এই সংখ্যা তিনগুনের বেশি বেড়ে প্রায় ২২ কোটি ছুঁয়েছে।
এভাবেই ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে মোবাইল ব্যাংকিং। কেবল টাকা পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতে প্রতি মুহূর্তে গতি সঞ্চার করে চলেছে মোবাইল ব্যাংকিং। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবামূল্য পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ প্রবাসী-আয় বা রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন অন্যতম পছন্দের মাধ্যম।
প্রতিদিন নতুন নতুন সেবা যোগ হচ্ছে। এই সেবার হাত ধরেই দেশে আসছে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও ডাক বিভাগের মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ ‘ডিজিটাল ব্যাংক’প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া প্রায় সব ব্যাংকও ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এই সেবা।
এমএফএস লেনদেন বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, ‘সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মোবাইল আর্থিক সেবা দেশের মানুষের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনকে প্রযুক্তিনির্ভর করে সহজ, নিরাপদ এবং তাৎক্ষণিক করেছে।’
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ