বিএনএ, ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম এর নির্বাচনী হালচাল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। আজ থাকছে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের হালচাল।
ঠাকুরগাঁও-১ আসনটি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৩ নাম্বার আসন।
১৯৭৩ সালে ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি রংপুর-৩ নামে পরিচিত ছিল।নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৫ শত ৩ জন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ১ শত ৪৫ জন ভোট প্রদান করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জোনাব আলী উকিল বিজয়ী হন। তিনি পান ৪৪ হাজার ৮ শত ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ ভাসানীর হাবিবুর রহমান চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯ হাজার ৪ শত ৪৯ ভোট।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি দিনাজপুর- ৩ সংসদীয় আসন নামে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশন। আসনটিতে ওই সময় ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩ শত ৮০ জন।এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৭৪ হাজার ১ শত ৯৩ জন। বিএনপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক ইদু চৌধুরী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ১৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ২ শত ৭৭ ভোট।
১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটির আবারও নাম পরিবর্তন করা হয়। এবার নাম হয় ঠাকুরগাঁও-১। বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এ আসনে ভোট প্রদান করেন ৯১ হাজার ৫ শত ১৪ জন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ১ শত ৭৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন ছবি । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ২ শত ৮৩ ভোট।
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রাথী রেজওয়ানুল হক ইদু চৌধুরী। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২২ হাজার ৩ ভোট। রেজওয়ানুল হক ইদু চৌধুরী বিএনপি থেকে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফ্রিডম পার্টির এম এনামুল হক। কুড়াল প্রতীকে তিনি পান ১১ হাজার ৩ শত ৩৯ ভোট। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বর্জন করে এই নির্বাচন।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৮ হাজার ৯ শত ৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১৪ হাজার ৫ শত ৫৪ জন। নারী ১ লাখ ৪ হাজার ৪ শত ২৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৫ শত ৩৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৪ শত ৬ ভোট।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭ শত ৫০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৭ শত ৯ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি পান ৫৮ হাজার ৩ শত ৬৯ ভোট।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩ শত ১৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৪ হাজার ৯শত ১০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ৯ শত ৪৮ ভোট।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৭ হাজার ৬ শত ৭৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ শত ১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মীর্জা ফখরুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২০ হাজার ৪ শত ১১ ভোট।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও- ১ আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭ শত ৭৩ জন । বিএনপি- জামায়াত ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোট এ নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৮ হাজার ২ শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ওয়ার্কাস পার্টির ইমরান হোসেন চৌধুরী। হাতুড়ি প্রতীকে তিনি পান ৩ হাজার ৩ শত ৩৪ ভোট।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও- ১ আসনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ২২ হাজার ৩ শত ৪২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রমেশ চন্দ্র সেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৫ হাজার ৫ শত ৫৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মীর্জা ফখরুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০ ভোট। বিএনপি সমর্থিত ঐক্য জোট কারচুপির অভিযোগে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী জয়ী হন।
১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হয়।
১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় এবং ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হন। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১১টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৭ বার এই আসনের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই আসনে মোট ভোটারের ২৩ শতাংশ হিন্দু। সব মিলিয়ে বলা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠ পর্যায়ের জরিপে ঠাকুরগাঁও-১ আসনে এগিয়ে আছে আওয়ামী লীগ।
বিএনএ/ শিরীন, ওজি , ওয়াইএইচ