বিএনএ বিশ্ব ডেস্ক: জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যা আজ ৮০০ কোটির মাইলফলক ছুঁয়েছে। এই সংখ্যা ৭০০ কোটি থেকে ৮০০ কোটিতে পৌঁছাতে ১২ বছর লেগেছে। এটি ৯০০ কোটি ছুঁতে আরও ১৫ বছর লাগবে। সেই হিসাবে বলা যায়, বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি আগের চেয়ে কমেছে।
তবে বিপুল এই জনসংখ্যাকে বিশ্বের জন্য বোঝা নয়, বরং অপার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ বলছে, ৮০০ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে কাজে লাগাতে পারলে অসীম সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই জনসংখ্যা ৮০০ কোটিতে পৌঁছানোর ব্যাপারটি মানুষের জন্য এবং এই পৃথিবীর জন্য এক মাইলফলক।
আরও পড়ুন: বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটি হবে ১৫ নভেম্বর
ইউএনএফপিএর হিসাব অনুযায়ী, বৈশ্বিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর। অন্যদিকে ইউরোপের দেশগুলোতে জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা বাড়ছে ভারতে।
ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৮০০ কোটি জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ লোক বাস করছে এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও চীনে। ভারতে ১৩৯ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় চার গুণ এবং যুক্তরাজ্যের ২০ গুণের বেশি। চীনের জনসংখ্যা ১৪১ কোটি। ভারতে প্রতিদিন ৮৬ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। অন্যদিকে চীনে দিনে জন্ম নিচ্ছে ৪৯ হাজার ৪০০ শিশু। এই হার অব্যাহত থাকলে ২০২৩ সালে ভারত হবে বিশ্বের শীর্ষ জনসংখ্যার দেশ। ২০৬০ সালে দেশটির জনসংখ্যা হবে ১৬৫ কোটি।
গার্ডিয়ান বলছে, এখন থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার বৃদ্ধির অর্ধেকের বেশি ঘটবে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, মিসর, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, তানজানিয়া ও ভারতে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ২ শতাংশ বাংলাদেশে রয়েছে। এটি বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনবহুল দেশ এবং সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১০ লাখ।
সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনার হিসাব মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গত এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ। বাড়ছে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ কর্মক্ষম। কোনো দেশে যদি ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম থাকে, তাহলে সে দেশকে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লাভজনক অবস্থার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে এই অবস্থায় রয়েছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে অনুকূল বলে গণ্য হয়। এই অবস্থা কোনো দেশে হাজার বছরে একবারই আসে। এটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হবে। চীন ও জাপান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। তবে আমাদের দেশে এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম এ বিষয়ে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসংখ্যাকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে পরিকল্পনা করতে হবে। মানুষকে কীভাবে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সেই পদক্ষেপ এখন আমাদের নিতে হবে। মানুষের জীবনের গুণগত উন্নয়ন করতে হবে। মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যানীতি হালনাগাদ করতে হবে।’
শ্রম মন্ত্রণালয় বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চায় সরকার। এ ছাড়া এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি অনুমোদন হয়েছে। ওই নীতি অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা নির্দিষ্ট সময় পর পেরিয়ে গেলে দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ে। তখন দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সেই অবস্থা মোকাবিলা করতেও এখনই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
এ লক্ষ্যে উদ্যোগ নিয়েছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের স্বীকৃতি দিয়ে আইনের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রবীণ উন্নয়ন আইনের খসড়া করেছে তারা। এই আইন পাস হলে প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন স্থাপন করে তার মাধ্যমে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সরকারিভাবে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে ওই আইনের খসড়াটি এখনো মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়নি।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ