বিএনএ, মিরসরাই (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্র পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরা তিনদিনে মিরসরাইয়ের দুইটি, থানা এলাকা থেকে চারটি মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে গেছে।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে মিরসরাই পৌরসভার মিরসরাই ক্যাফে থেকে ১টি ডিসকভার মোটরসাইকেল, বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার ৪নং ওসমানপুর ইউনিয়নের পাতাকোট এলাকা থেকে দুটি মোটরসাইকেল ও সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে একই উপজেলার মিরসরাই থানার ১২নং খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নয়দুয়ারীয়া এলাকা থেকে দুটিসহ মোট ৫টি মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায়।
মিরসরাইয়ের মোটরসাইকেল চোর চক্রটি চিহ্নিত ও সংঘবদ্ধ। এরা দিনে ছাত্ররাজনীতি করে রাতে চুরি ছিনতাই করে। এরা রাজনৈতিক বড়ভাইদের পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আদর মহব্বতে পরিপূর্ণ। তাই তারা আইনকানুনের তোয়াক্কা করেনা, ভয় করেনা থানা পুলিশ, গ্রেপ্তার কিংবা জেল আদালতের।
মোটরসাইকেল চোর চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় সাংবাদিক আশরাফ উদ্দিন সংবাদ প্রকাশ করলে চক্রটি সংঘবদ্ধ হয়ে ওই সাংবাদিকের ওপর হামলা করে। সড়কে হামলার পর সাংবাদিক আশরাফ মিরসরাই থানার অভ্যন্তরে আত্মরক্ষা জন্য অবস্থান নিলে সেখানেও দুই দফা হামলার চেষ্টা করে এই চক্রটি। থানার ভেতরে পুলিশের সামনে মোটরসাইকেল চোর চক্রটি সাংবাদিক আশরাফকে জবাই করে হত্যার হুমকি দেয়। হামলার ঘটনায় মিরসরাই থানায় মামলা করতে গেলে মিরসরাই থানার ওসি কবির হোসেন মামলা না নিয়ে একটি জিডি গ্রহণ করেন। হামলার ঘটনায় চোর চক্রটিকে রক্ষা করার জন্য ওসি কবির হোসেন মোটরসাইকেল চোর চক্রের মুল হোতা মেহেরাজ অনিকে সাংবাদিক আশরাফের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন। সাংবাদিক আশরাফের পূর্বে করা জিডি থাকলেও মামলা না নিয়ে নতুন করে জিড়ি নিয়ে চোর চক্রের মূল হোতা থেকেও সাংবাদিক আশরাফের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগে জিডি গ্রহণ করেন। এতে চোর চক্রের সাথে ওসি কবির হোসেনের সখ্যতা স্পষ্ট প্রকাশ পায়। ফলে এই চক্রটিই পুলিশের সহায়তায় মিরসরাইয়ের আনাচে কানাচে তাদের সোর্সের মাধ্যমে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চুরি চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।
গত সোমবারে ২টি মোটরসাইকেল হারানো আলাউদ্দিন খোকন বলেন, বাড়ির বাউন্ডারীর ভেতর থেকে গেইটের তালা ভেঙে আমার ২ টি মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে। স্থানীয় কেউ জড়িত না থাকলে আমার বাড়ির ভেতরে মোটরসাইকেল আছে এটা বাইরের কেউ জানার কথা নয়। চুরি হওয়ার সাথে সাথে মিরসরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু থানা থেকে কোন রিসিভং দেয় নাই।
মোটরসাইকেল হারানো ওচমানপুরের অভি জানান, বাড়ির গেইটের তালা ভেঙে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিক লকার ভেঙ্গে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। স্থানীয় লোকের পাশাপাশি বহিরাগতরা চুরিতে জড়িত বলে ধারণা করছি। চুরির ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করছি। কিন্তু থানা থেকে কোন রিসিভং দেয় নাই।
স্থানীয় মিরসরাই ক্যাফের মালিক দিদার জানান, শুক্রবার ভোররাতে চোর চক্রটি দোকানের ভেতরে রাখা পণ্য ভেলিভারির ডিসকভার মডেলের মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায়। দোকানের সিসি ক্যামেরায় বহিরাগত এক যুবককে দেখা গেছে। তবে ক্যামরার বাইরে আরো লোক থাকতে পারে। অভিযোগ করার জন্য থানায় গেলে থানার ওসি কবির হোসেন পরে যাওয়ার জন্য বলেছেন।
স্থানীয়দের অভিমত, রাজনৈতিক আশ্রয় ও প্রশাসনিক রহস্যজনক নিরবতার কারণে পুনরায় মোটরসাইকেল চোর চক্রটি সক্রিয় হয়েছে। তারা একদিন মিরসরাই থানা এলাকায় চুরি করলে পরেরদিন জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় চুরি করে। কোনদিন সদর এলাকায় চুরি করে তো অন্যদিন গ্র্যাম্য এলাকায় চুরি করে। তবে তাদের সোর্স প্রতিটি ওয়ার্ড-ইউনিয়নে রয়েছে। সোর্সগুলো পরিচিত স্থানীয়দের মোটরসাইকেল কে কোথায় রাখে তার তথ্য সরবরাহ করে মুল চক্রকে। সোর্সের দেখানো স্থান থেকে রাত ৩টা থেকে ভোর ৪টা মানুষ যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে ওই সময় চুরি করে নিরাপদে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় তাদের গাড়ির গতি থাকে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটারের উপরে। ফলে স্থানীয় সিসি ক্যামেরায় তাদের চলার চিত্র ধরাপড়লেও কাউকে চেনার উপায় থাকে না। তবে চোর চক্রটি চিহ্নিত ও বেশ কয়েকবার হাজত খেটেছে। থানা পুলিশের কাছে তাদের তথ্য রয়েছে। মোটরসাইকেল চোর চক্রের যে সকল সদস্য জামিনে আছে তাদের নজরদারিতে রাখলে পুনরায় মোটরসাইকেল চুরি সম্ভব হতো না।
আরও পড়ুন: দুর্গম এলাকা থেকে আসা খেলোয়াড়দের জন্য হোস্টেল হবে রাঙামাটিতে- যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী
বিএনএনিউজ/ আশরাফ উদ্দিন, বিএম