22 C
আবহাওয়া
২:৪২ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গাছে পেরেক ঠুকে রাবিতে সাঁটানো হচ্ছে ব্যানার-পোস্টার

গাছে পেরেক ঠুকে রাবিতে সাঁটানো হচ্ছে ব্যানার-পোস্টার

গাছে পেরেক ঠুকে রাবিতে সাঁটানো হচ্ছে ব্যানার-পোস্টার

বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে লাগামহীনভাবে লাগানো হচ্ছে ব্যানার-পোস্টার। শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ব্যানার সাঁটাতে দেখা গেছে নেতা-কর্মীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত মঙ্গলবার ক্যাম্পাসের গাছে পেরেক ঠুকে ব্যানার-ফেস্টুন না লাগানোর জন্য শিক্ষার্থীসহ সকল মহলকে বিরত থাকতে সতর্কতামূলক প্রচারণা চালায়। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। নির্দেশনার পরেও গাছগুলোতে ঝুলছে ব্যানার।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের গেট পর্যন্ত প্যারিস রোডের গগনশিরিশ গাছ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনের দেবদারু গাছগুলোসহ ক্যাম্পাসের মূল জায়গায়গুলোতে প্রায় প্রতিটি গাছেই পেরেক ঢুকে ব্যানার-পোস্টার সাঁটিয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। এভাবে নির্বিচারে পেরেক ঠুকানোর ফলে গাছগুলো মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্যারিস রোডে যেসব নেতার সাইনবোর্ড দেখা গেছে তাদের মধ্যে আছেন ছাত্রলীগের কর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বদেশ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ ও সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল এবং শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপু।

গাছে পেরেক বিদ্ধ করে সাইনবোর্ড না লাগাতে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। সিটি করপোরেশন আইনে ১৯৯০-এর ৯২ ধারার ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যত্রতত্র পোস্টার-ব্যানারসহ প্রচারপত্র সেঁটে দেওয়া এবং গাছে সাইনবোর্ড লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এই আইনের আওতায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানও আছে।

সাইনবোর্ড সাঁটানোর বিষয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা জানতাম না। যেহেতু নির্দেশনা এসেছে, আমি সাইনবোর্ডগুলো দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা করবো।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী জেলার সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, “গাছের জীবনকে নষ্ট করার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই। এখানে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। সরকার আইন করেছে কিন্তু আইনকে যারা বাস্তবায়ন করবে তারা সঠিকভাবে সেটা পালন করছে না। কোনোভাবেই এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। যদি সকলকে সচেতন করা যায় তাহলে আগামী দিনে গাছ নিধন কমে আসবে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কবির বলেন, “গাছে পেরেক ঢুকানো একদম ঠিক না। পেরেক ঢুকানোর ফলে গাছ ব্যথা পায়। গাছ অস্বস্তি প্রকাশ করে। গাছ কথা বলতে পারে না, তাই এভাবে হাজার কষ্ট সহ্য করে।”

উদ্ভিদবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আরও বলেন, “পেরেক ঢুকানোর ফলে গাছগুলো নানা রোগে আক্রান্ত হয়।পেরেক একবার ঢুকালে সেখানে গর্ত হয়ে যায়; পরে সেই গর্তে নানান রকমের জীবাণু প্রবেশ করে। অনেক গাছ সেই জীবাণুগুলো সহ্য করতে পারে না। তখন গাছের গায়ে টিউমার হয়ে যায়। একপর্যায়ে গাছগুলো মারা যায়। মানুষকে উৎসাহিত করা উচিৎ যেন গাছে পেরেক না মারে।”

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “গাছগুলো বাঁচাতে আমরা যদি একে অপরের সহযোগিতা না করি তাহলে তো গাছগুলোর ক্ষতি হবেই। এই ক্ষতিটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের হবে না, ক্যাম্পাসের প্রতিটা মানুষের জন্য ক্ষতি। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি গাছগুলোতে দরকার হলে দড়ি দিয়ে বেঁধে সাইনবোর্ডগুলো লাগাতে; কিংবা ফ্রেম তৈরি করে বা অন্য কোনো উপায়ে যদি প্রচারণা চালানো যায়, তারা করুক। সবার উচিত গাছগুলোকে বাঁচানো।”

নির্দেশনার পরেও গাছগুলোতে এভাবে ব্যানার-পোস্টার কেন লাগানো হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে রাবি উপ-উপাচার্য বলেন, “তিনদিন আগে এই কথাগুলো জেনে আমি প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টাকে বিষয়টি নিয়ে খবর নিতে বলেছি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের বাইরে আছি আমি।যারা গাছে সাইনবোর্ডগুলো লাগাচ্ছে দুই-একদিনের মধ্যে আমরা তাদের সাথে বসবো।”

বিএনএ/সাকিব, ওজি /হাছিনা আখতার মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ