।।ইয়াসীন হীরা।। বাংলাদেশের সর্ব-দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলার অবস্থান। টেকনাফের উত্তরে উখিয়া উপজেলা, পূর্বে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং দক্ষিণে ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর।কক্সবাজার জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার।
১৯৩০ সালে গঠিত হয় টেকনাফ থানা । ১৯৮৩ সালে টেকনাফ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।পাহাড় ও নদী-সাগর ঘেরা টেকনাফ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন আছে। আয়তন ৩৮৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ২,৬৩,৩৮৯ জন । এর মধ্যে পুরুষ ১,৩২,৮৫৭ জন এবং মহিলা ১,৩০,৫৩২ জন।মোট জনসংখ্যার ৯৭.২% মুসলিম, ১.৩% হিন্দু, ১.৪% বৌদ্ধ এবং ০.১% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
টেকনাফের মানুষ নাফ নদী-বঙ্গোপসাগর থেকে মৎস্য আহরণ, শুটকি উৎপাদন, মৎস্য খামার, লবণ উৎপাদন ও পান সুপারী চাষ ও কৃষি কাজ করে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু এখন ৮০ শতাংশ মানুষ ইয়াবা চোরাচালান, ক্রয়-বিক্রয়, বহণ, পরিবহণ ও সংরক্ষণ করে আসছে। অজপাড়াগাঁয়ে দেখা মিলছে দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা। জীবনযাপনে রয়েছে বিলাসিতা।
টেকনাফের মানুষের কাছে ইয়াবা কোনো চোরাচালান বা অবৈধ ব্যবসা নয়! তাদের যুক্তি টাকা দিয়ে কিনে আনলে অবৈধ হয় কীভাবে? তাদের কাছে ইয়াবা সাধারণ অন্য ১০ টা পণ্যের মতো!
এক সময় থাইল্যান্ডে ব্যাপকভাবে ইয়াবা সেবন হতো। বিশেষ করে ট্রাক ড্রাইভার ছিল এর প্রধান ভোক্তা। সেকারণে পেট্রল পাম্প গুলোতে ইয়াবা বিক্রি হতো সবচেয়ে বেশি। থাই ট্রাক চালকেরা জেগে থাকার জন্য ইয়াবা সেবন করতো। ইয়াবাসেবী ট্রাক ও বাস চালকদের হাতে অনেক গুলো ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে থাই সরকার ১৯৭০ সালে ইয়াবা ট্যাবলেটকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
টার্গেট বাংলাদেশ!
হিটলার কী জানতেন তার আবিস্কার এক সময় মরণনেশায় পরিণত হবে? প্রজম্মের পর প্রজন্ম ধংস হয়ে যাবে?
মিয়ানমারে ওয়া এবং কোকাং নামের আদিবাসী সম্প্রদায় মেথাম্ফেটামিন পিল বা ইয়াবা এর সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। এই দুই গোষ্ঠীর লোকজন পূর্বে আফিম এবং হেরোইন উৎপাদন এর সাথে জড়িত ছিল। উল্লেখ্য যে, মিয়ানমারে খুব সাধারণ ল্যাবরেটরিতে ইয়াবা পিল তৈরি করা হয়। ইয়াবা উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান এবং কাচিন প্রদেশে৷
বিশ্বব্যাপী ইয়াবা উৎপাদন, বাজারজাত, সেবন নিষিদ্ধ। কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার এ নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। মূলত ১৮ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশকে টার্গেট করে দেশটি ইয়াবার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে!
বাংলাদেশ থেকে বছরে কত হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই দেশের কোনো সংস্থার কাছে। তবে ধারণা করা হয় বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ইয়াবা বাবদ পাচার হচ্ছে। এছাড়া বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট বেচাকেনা হচ্ছে।
পড়ুন আগের পর্ব:
টেকনাফের অর্ধশত রুটে আসে ইয়াবা!- পর্ব- ৩
মডেল-নায়িকা-শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা কেন সেবন করে ইয়াবা? পর্ব-২
‘ইয়াবা’ কেন জনপ্রিয় মাদক? পর্ব-১