24 C
আবহাওয়া
১০:৩৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু 

বঙ্গবন্ধু

বিএনএ, ঢাকা : পাক শাসকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বাঙালি জাতিকে মুক্তির স্বাদ এনে দিলেন তিনি।  বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন দেশের তিনিই প্রথম রূপকার।  ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে মহানায়ক, তিনি বঙ্গবন্ধু, আমাদের জাতির পিতা। একাত্তরে সাতই মার্চে দেওয়া তার বজ্রদীপ্ত ভাষণ নতুন ভাবে বাঙালিকে মুক্তি পাগল করে তোলে।  তিনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি।  হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তাইতো তিনি বঙ্গবন্ধু । 

মার্কিন কূটনৈতিক অ্যার্চার ব্ল্যাড তার গ্রন্থে লিখেছেন, শেখ মুজিব ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানেরমুকুটহীন সম্রাট।তবে এই মুকুটহীন সম্রাট হয়ে ওঠার পেছনের ইতিহাসটা সবাই গভীরভাবে লক্ষ্য করে থাকবেন। মানুষের দুঃখকষ্ট তাকে খুবই ভাবাতো। তিনি দুঃখী গরিবের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য দিন রাত কাজ করতেন।

কী ছিল তার সাতই মার্চের ভাষণে?

“…মনে রাখবারক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রামএবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেস কোর্স ময়দানের এক জনসভায় এই বজ্রঘোষণার মাধ্যমে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন।

 

২০০৪ সালে বিবিসি বাংলা একটিশ্রোতা জরিপ‘-এর আয়োজন করে। বিষয়টি ছিলোসর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? তিরিশ দিনের ওপর চালানো জরিপে শ্রোতাদের মনোনয়নে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। 

যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান

ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত কাব্য, মহাকাব্য অন্যান্য সাহিত্য কিংবা প্রবন্ধ, নিবন্ধ গবেষণা হয়েছে, দুনিয়ার আর কোনো জননেতা সম্পর্কে হয়তো এত রচনা এখনো রচিত হয় নি।  তাকে নিয়ে লেখা বইয়ের মধ্যে পাঠক সমাদৃত কয়েকটি বই হচ্ছেসিক্রেট ডক্যুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান১ম ২য় খণ্ড (হাক্কানী পাবলিশার্স); আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীরবঙ্গবন্ধু আজ যদি বেঁচে থাকতেন’ (আগামী); মোনায়েম সরকারেরবাংলাদেশ শেখ মুজিব থেকে শেখ হাসিনা’ (আগামী); হারুনঅররশিদের৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব ঐতিহ্য সম্পদ’ (অন্যপ্রকাশ); শামসুজ্জামান খানেরলেখক বঙ্গবন্ধু অন্যান্য’ (কাকলী); আনিসুল হকেরবঙ্গবন্ধুর জন্য ভালোবাসা’ (পার্ল); সুব্রত বড়ুয়ারজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ (ঝিঙেফুল)

এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার রচিত সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যাও কম নয়। এগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমী কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর জীবনী গ্রন্থ (দুই খণ্ডে) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: জীবন রাজনীতি (২০০৮), রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি (১৯৮২), ইতিহাসের আলোকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ বঙ্গবন্ধু (১৯৯২), ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু (১৯৯৪), মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব (১৯৯৫), শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ (১৯৯৮), বাঙালি বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু (২০০০), বাংলাদেশের সমাজবিপ্লবে বঙ্গবন্ধুর দর্শন (২০০০), ইতিহাসের আলোকে বাঙালি জাতীয়তার বিকাশ বঙ্গবন্ধু (প্রথম সংস্করণ১৯৯২, দ্বিতীয় সংস্করণ২০০০), বাঙালির কণ্ঠ (২০০১), সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি (২০০৪), একবিংশ শতাব্দীতে মুজিবের প্রাসঙ্গিকতা (২০০৭), সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি (২০১০), বাঙালির ঐতিহ্য ভবিষ্যৎ (২০১০), আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ (২০১০) বইগুলোও পাঠকরা খোঁজে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও জানার জন্য। 

বঙ্গবন্ধুর জন্ম পরিবার:-

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহন শেখ মুজিবুর রহমান। বাবা শেখ লুৎফর রহমান কখনো হয়তো ভাবেননি  তার ছেলে এতটা পথ এগিয়ে যাবেন। শেখ মুজিবের বাবা খুব সাধারণ ছিলেন,তিনি গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার ছিলেন। মা সায়েরা খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে শেখ মুজিব ছিলেন তৃতীয়। ছোট বেলা থেকে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি,সাহসী প্রতিবাদি ছিলেন তিনি।

একাত্তরের সাতই মার্চের বিকালে রেসকোর্সের ময়দানে মঞ্চ তখন প্রস্তুত, সবাই অধীর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর নির্দেশ পেতে। আন্দোলন এবং মানুষের আকাঙ্ক্ষা বিবেচনায় রেখেই তেসরা মার্চ পল্টনের ছাত্র সমাবেশে বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।

স্বাধীনতা অর্জনের পথে রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধু :

তিনি ১৯৪৮ সালে জানুয়ারির তারিখে প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যার মাধ্যমে তিনি একজন অন্যতম প্রধান ছাত্র নেতায় পরিণত হন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেবার পর এর বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলন শুরু হয়, সে আন্দোলনে একটা অগ্রণী ভূমিকা ছিল শেখ মুজিবের।

 

বিভিন্ন আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার জন্য ১৯৪৮ সাল থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বহুবার কারাভোগ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান।

 

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করার পর শেখ মুজিবুর রহমান মুসলিম লীগ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন দলে যোগ দেন এবং তাঁকে পূর্ব পাকিস্তান অংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

 

শেরে বাংলা কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নামে যে বিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চ গঠিত হয়েছিল, তার মূল দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য অধিকতর স্বায়ত্তশাসন। এই জোটের টিকেটে ১৯৫৪র নির্বাচনে গোপালগঞ্জ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন শেখ মুজিব। তাঁকে তখন কৃষি বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

 

কিন্তু নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ওই যুক্তফ্রন্ট ভেঙে দেয়।

১৯৫৫ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের নাম থেকেমুসলিমশব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছিল। শেখ মুজিব আবার দলের মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 

পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারি করা হয়। সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে সংগ্রামের কারণে তাঁকে কয়েক বছর আবার জেল খাটতে হয়েছিল।

 

এরপর ১৯৬১ সালে অন্যান্য সাধারণ ছাত্রনেতাদের নিয়ে গোপনে তিনি স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে এক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করা।

 

১৯৬৬ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেছয় দফা দাবিপেশ করেন।

 

১৯৬৮ সালের ৩রা জানুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে যে মামলাটি হয় তাতে এক নম্বর আসামী করা হয় বঙ্গবন্ধুকে।

মামলায় বলা হয়েছিল শেখ মুজিব তাঁর সহযোগী বাঙালি কর্মকর্তারা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরে ভারত সরকারের সাথে এক বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে।

ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয় তা এক সময় গণ আন্দোলনে রূপ নেয়। সেই গণ আন্দোলন বা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান চরম রূপ ধারণ করলে পাকিস্তান সরকার শেষ পর্যন্ত এই মামলা প্রত্যাহার করে নেয় এবং শেখ মুজিবসহ অভিযুক্ত সকলকে মুক্তি দেয়া হয়।

 

সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯৬৯ সালের ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় শেখ মুজিব যখন ঘোষণা করলেন যে এখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানকেবাংলাদেশনামে অভিহিত করা হবে, তখন পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ সামরিক কর্তারা তাঁকে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার তকমা দিলেন।

 

শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে ওই নির্বাচনী ফলাফল পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে মেরুকরণ তৈরি করল। পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো, শেখ মুজিবের স্বায়ত্বশাসনের নীতির প্রবল বিরোধিতা করলেন।

 

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বুঝতে পারল যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমানের দলকে সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না।

 

ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এক জনসভায় শেখ মুজিব স্বাধীনতার ডাক দিলেন এবং জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হবার আহ্বান জানালেন। যার মধ্যে দিয়ে শুরু হল বাংলাদেশের নয় মাস ব্যাপী সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম।

শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো পশ্চিম পাকিস্তানে এবং ফয়সালাবাদের একটি জেলে কড়া নিরাপত্তায় রাখা হলো। এরপর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২এর দশই জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে গেলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

-এইচ.এম।

Loading


শিরোনাম বিএনএ