31 C
আবহাওয়া
২:২৭ অপরাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১২৪ (বরিশাল- ৬)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১২৪ (বরিশাল- ৬)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বরিশাল-৬ আসনের হালচাল।

YouTube player

বরিশাল-৬ আসন 

বরিশাল-৬ সংসদীয় আসনটি বাকেরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদের ১২৪তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মাদ ইউনুস খান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৫ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩ হাজার ৮ শত ৩৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মাদ ইউনুস খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৩শত ৬১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মুজিবুর রহমান তালুকদার। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৭ হাজার ১ শত ৮৯ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দ মাসুদ রেজা বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৪শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১লাখ ৫ শত ১৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ মাসুদ রেজা বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৮ শত ৬৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুর রশীদ খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৩৮ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবুল হোসেন খান বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৪ শত ২১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪ শত ৫৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির আবুল হোসেন খান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৩ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সৈয়দ মাসুদ রেজা । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ১ শত ৭১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩ শত জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯ শত ১৬ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এবিএম রহুল আমিন হাওলাদার বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৩ শত ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবুল হোসেন খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি ৫৫ হাজার ১ শত ১০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮ শত ৪২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩ শত ৩৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আবুল হোসেন খান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না, মশাল প্রতীকে জাসদের মোহাম্মদ মোহসীন, বাইসাইকেল প্রতীকে জাতীয় পার্টি (মন্জুর)খন্দকার মাহতাব উদ্দিন, তারা প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) এর একেএম নুরুল ইসলাম, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নূরুল ইসলাম–আল-আমিন, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী তালুকদার-ফারুক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩ শত ৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবুল হোসেন খান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি ১৩ হাজার ৬ শত ৫৮ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম সংসদে আওয়ামী লীগ এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বরিশাল-৬ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বরিশাল-৬ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৫.৮৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.১৮%, বিএনপি ৪০.৮০%, জাতীয় পার্টি ১৮.৭৭%, জামায়াতে ইসলামী ২.১৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১২.১২% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.১৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৬৫%, বিএনপি ৩৩.৮৬%, জাতীয় পাটি ১৫.৫৮%, জামায়াতে ইসলামী ২.০০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৬.৯১% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬০.০৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩০.৩৯%, ৪দলীয় জোট ৪০.১০%,জাতীয় পার্টি ১৪.৮৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৪.৬৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৭৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৮.৭৫%, ৪দলীয় জোট ৩৫.৫৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৬৯% ভোট পায়।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্না। তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির ঐক্য হলে নাসরিন সুলতানা রত্না আবারও আওয়ামী লীগের সমর্থন চাইবেন। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দিবে না।
আওয়ামী লীগ থেকে এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজ মল্লিক। বাকেরগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সামসুল আলম চুন্নু, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মাসুদ রেজার স্ত্রী ও জেলা পরিষদের সদস্য আইরীন রেজা, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পারভিন তালুকদারের স্বামী শিল্পপতি আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক তালুকদার, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল হক মঞ্জু এবং যুবলীগ কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মতিউর রহমান বাদশা।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খান, বরিশাল জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খান রাজন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. শহীদুল ইসলাম।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নুরুল ইসলাম আলআমিন। জাসদ (ইনু)র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসীন এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভৌগলিক কারনেই উপজেলাটিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি খুবই মজবুত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে উপজেলা, পৌরসভা এমনকি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে আওয়ামী লীগের জয়জয়কার। তবে ছাড় দিতে হয় শুধু সংসদ নির্বাচনে। শক্ত অবস্থানে থেকেও জোটগত কারণে জাতীয় পার্টিকে দিয়ে দিতে হচ্ছে বরিশাল-৬ আসনটি। রাজনৈতিক সমীকরণ যেদিকে যাচ্ছে তাতে এবারও আওয়ামী লীগ মিত্রদের নিয়ে মহাজোট গঠন করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আবারও কপাল পুড়বে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থীদের।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১২৪ তম বরিশাল-৬ সংসদীয় আসনটিতে জাতীয় পার্টি প্রার্থীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বিএনপি প্রার্থীর।

বিএনএ/ শিরীন,রেহানা ,ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ