28 C
আবহাওয়া
১১:২০ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ১৯, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » কর্ণফুলীর আ.লীগ নেতা মো.আলীকে হত্যা মামলায় ঘোড়া মালেককে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার

কর্ণফুলীর আ.লীগ নেতা মো.আলীকে হত্যা মামলায় ঘোড়া মালেককে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার

কর্ণফুলীর আ.লীগ নেতা মো.আলীকে হত্যা মামলায় ঘোড়া মালেককে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার

বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় রাজনৈতিক সহিংসতার জের ধরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলীকে হত্যা মামলায় এবং তাঁতী লীগ নেতা মো. আব্দুল মালেক ওরফে ‘ঘোড়া মালেক’-কে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। দুই নেতাই দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে তাদের চট্টগ্রাম মহানগর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দু’জনকেই জেল হাজতে রাখার আবেদন করেছে পুলিশ।

কে এই মো. আলী?
গ্রেপ্তার মো. আলী (৫৬) কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত মো. ইব্রাহীম সওদাগর। এক সময় তিনি চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের এডহক কমিটির সদস্য ছিলেন এবং পরবর্তীতে সাবেক অর্থ প্রতিমন্ত্রী ড. ওয়াসিকা আয়শা খানের বলয়ে যুক্ত হয়ে দলের অভ্যন্তরে তৎপরতা চালান। তবে সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনও করেন। তাও নৌকার বিরুদ্ধে।

গত ১৩ এপ্রিল দুপুরে ইছানগর বিএফডিসি এলাকা থেকে মো. আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাকে আগে থেকেই নজরদারিতে রাখা হয়েছিল এবং তার গ্রেপ্তারের সময় নিয়ে পুলিশের বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে।

ঘোড়া মালেক: তৃণমূলের সংগঠক থেকে মামলার আসামি

অপরদিকে, আব্দুল মালেক ওরফে ‘ঘোড়া মালেক’ (৪৬) জুলধা ইউনিয়নের হাজী নাজির উল্লাহর বাড়ির বাসিন্দা। তিনি কর্ণফুলী উপজেলা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। এলাকাবাসী জানায়, বিভিন্ন সময় মালেক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরীর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মিছিল-মিটিংয়ে সরব উপস্থিতি রাখতেন।

গত ১২ এপ্রিল রাতে স্থানীয় জনতা তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থতা নিশ্চিত হওয়ার পর ১৪ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়।

যেসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে
মো. আলীর বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানার মামলা নং-২২, ফৌজদারি আইনের ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৬/৩০৭/৩০২/১০৯/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৮ জুলাই বিকেলে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪’ এর শান্তিপূর্ণ অবস্থানে হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী। এ হামলার নেতৃত্বে ছিলেন মো. আলী ও তার অনুসারীরা। তারা দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র এবং ইট-পাটকেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। এতে সায়মান মাহিন (১৬) নামের এক কিশোর ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। একই ঘটনায় আরও দুজন—তানভীর ছিদ্দিকী (১৯) ও হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩)—নিহত হন এবং কয়েকজন গুরুতর আহত হন।

অন্যদিকে, ঘোড়া মালেকের বিরুদ্ধে দায়ের করা চান্দগাঁও থানার মামলা নং-১১, যার আওতায় ধারা ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৬/৩০৭/১০৮/৩৪ ফৌজদারি আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩(ক) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার বাদী একজন ছাত্র, যিনি ওইদিনের আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। তার অভিযোগ, আন্দোলন চলাকালীন ঘোড়া মালেক ও তার নেতৃত্বাধীন লোকজন অস্ত্রসহ হামলা চালায় এবং মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

পুলিশের দাবি
চান্দগাঁও থানার ওসি মো. আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘মামলা দুটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিদের জামিন নয়, জেল হেফাজতে রেখে নিরপেক্ষ তদন্ত অব্যাহত রাখা হবে।’

তবে স্থানীয়দের একাংশ বলছে, পুলিশ যেভাবে গ্রেপ্তারের সময় ও স্থান ব্যাখ্যা করছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। তারা দাবি করছে, এসব ঘটনা ‘দৃশ্যমান নাটক’ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে সাজানো হতে পারে।

জাটকা ও মাছ ব্যবসায় সায় না দেওয়ায় আলী গ্রেপ্তার?

নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, বেশ কিছুদিন আগে নগরীর কিছু যুবক ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ছাত্র পরিচয়ে মোহাম্মদ আলী চেয়ারম্যানের কাছে জাটকা ও অন্যান্য মাছের ব্যবসার অনুমতি চান। আলী এতে রাজি না হয়ে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। এতে ক্ষিপ্ত হয় ওই যুবকরা, যারা নিজেদের ছাত্র পরিচয় দিয়ে চলছিলো। সূত্রমতে, তারাই পরে পুলিশ প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে কর্ণফুলীর ইছানগরের বিএফডিসি সড়ক এলাকা থেকে মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করায়। যা নিশ্চিত করেছেন কর্ণফুলী থানার একাধিক পুলিশ সদস্য।

মামলা নিয়ে প্রশ্ন
সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলী ও তাঁতী লীগ নেতা ঘোড়া মালেকের গ্রেপ্তার শুধু দুটি মামলা নয়, বরং কর্ণফুলীর রাজনৈতিক অঙ্গনের ভাঙন, দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের এক অনিবার্য চিত্র। পুলিশকে এখন দায়িত্ব নিতে হবে এই মামলা দুটি যেন সত্যিই নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হয়—না হলে এটিও ‘রাজনৈতিক মামলা’ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে।

বিএনএনিউজ/ নাবিদ

Loading


শিরোনাম বিএনএ