বিএনএ, ঢাকা: টানা ৪ বারের ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে। ৪৮টি আসনের বিপরীতে মনোনয়ন সংগ্রহ করে ছিলেন ১ হাজার ৫৫৩ জন নারী। প্রতিটি আসনের বিপরীতে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ৩২ জন। সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলের আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
১৪ ফেরুয়ারি যাচাই–বাছাই করে ৪৮ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ জনই প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন এমন ৭ জন আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন এবং ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল থেকে পেয়েছেন একজন। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ৮ জন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। এদের মধ্যে চার জন প্রথমবার মনোনীত হলেন।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে টানা চতুর্থবারের মতো সংরক্ষিত আসনে এমপি পদে মনোনয়ন পেয়েছেন মন্ত্রিসভার সদ্য সাবেক সদস্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা। অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান। তিনি টানা তিনবার সংসদ সদস্য হচ্ছেন। কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
কিন্তু জাসদকে আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়। তিনি নবম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা এবার প্রথম মনোনয়ন পেলেন। দলের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।
দলটির কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি এর আগে নবম ও দশম জাতীয় সংসদের এমপি ছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন দলটির কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম। তিনি নবম সংসদে এ আসনের এমপি ছিলেন। এরপর দশম সংসদে সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন। আবারও সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেলেন।
প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির আরেক কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আট জন সদস্য এমপি পদে মনোনয়ন পেয়েছেন। তাদের মধ্যে চার জনই প্রথম মনোনয়ন পেলেন।
গত তিন সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৩ আসনের এমপি ছিলেন মুন্নুজান সুফিয়ান। গত মন্ত্রিসভার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় এবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো দলের মনোনয়ন পেয়েছেন আরমা দত্ত, অপরাজিতা হক, নাহিদ ইজাহার খান, ফরিদা খানম, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা লীগের সভাপতি শাহিদা তারেখ দীপ্তি, যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি গত তিন সংসদে গাজীপুর-৫ আসনের এমপি ছিলেন। দ্বাদশেও মনোনয়ন পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। এবার তিনি সংরক্ষিত আসনের এমপি হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী ছাড়া বাকি ৩০ জন নতুন মুখ হলেন—রেজিয়া ইসলাম (পঞ্চগড়), দ্রোপদী দেবী আগরওয়ালা (ঠাকুরগাঁও), আশিকা সুলতানা (নীলফামারী), যুব মহিলা লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি (নাটোর), জারা জাবিন মাহবুব (চাঁপাইনবাবগঞ্জ), রুনু রেজা (খুলনা), ফরিদা আক্তার বানু (বাগেরহাট), ফারজানা সুমি (বরগুনা), খালেদা বাহার বিউটি (ভোলা), নাজনীন নাহার রশিদ (পটুয়াখালী), জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন (নরসিংদী), উম্মি ফারজানা সাত্তার (ময়মনসিংহ), নাদিয়া বিনতে আমিন (নেত্রকোনা), মাহফুজা সুলতানা মলি (জয়পুরহাট), লায়লা পারভীন (সাতক্ষীরা), বেদৌরা আহমেদ সালাম (গোপালগঞ্জ), পারুল আক্তার (ঢাকা), সাবেরা বেগম (ঢাকা), ঝর্ণা হাসান (ফরিদপুর), অনিমা মুক্তি গোমেজ (ঢাকা), শেখ আনার কলি পুতুল (ঢাকা), মাসুদা সিদ্দীক রোজি (নরসিংদী), হাছিনা বারী চৌধুরী (ঢাকা), রুমা চক্রবর্তী (সিলেট), আশ্রাফুন নেছা (লক্ষ্মীপুর), কানন আরা বেগম (নোয়াখালী), শামীমা হারুন লুবনা (চট্টগ্রাম), দিলোয়ারা ইউসুফ (চট্টগ্রাম), জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা (রাঙামাটি), নাছিমা জামান ববি (রংপুর)।
কানন আরা বেগম ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল গণতন্ত্রী পার্টির রাজনীতি করেন। জোটের বিবেচনায় স্বতন্ত্র হিসেবে নোয়াখালী থেকে তাকে মনোনীত করেছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি। আপিল দায়ের ২২ ফেব্রুয়ারি এবং আপিল নিষ্পত্তি হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ ফেব্রুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং ভোটগ্রহণ হবে ১৪ মার্চ। তবে একাধিক প্রার্থী না থাকলে মনোনীতদের বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
বিনোদন জগত থেকে কেউ এবার মনোনয়ন পাননি। যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারা সবাই রাজনীতিক। তৃণমূল পর্যায় থেকে ওঠে আসা এ সব নারীরা আওয়ামী লীগের রাজপথে আন্দোলনের সারথি। দল তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করেছে। এতে খুশি মাঠ পর্যায়ের নারী নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যরা শোভা বৃদ্ধি করবে না, তারা নির্বাচিত সংসদ সদস্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আইন প্রনেতা হিসাবে ভূমিকা রাখবেন। সংরক্ষিত নারী আসনে রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মনোনয়ন দিয়ে বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক মেধা প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী