22 C
আবহাওয়া
৯:২৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২২

কারাগারের রোজনামচা

১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক অসংখ্যবার কারাগারে বন্দি রেখে বাঙ্গালী জাতিকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর শুধু প্রথম তিন মাসে বঙ্গবন্ধুকে মোট আটবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।কারাগারে নিজের, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও অন্য বন্দিদের সুখ, দুঃখ, কারাগারে বিভিন্নভাবে নির্যাতন বিভিন্ন সময়ে খাতায় লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এর নাম দিয়েছিলেন ‘থালাবাটি কম্বল / জেলখানার সম্বল’।

‘কারাগারের রোজনামচা’

বঙ্গবন্ধুর কারাগারে লেখা খাতাগুলো খুঁজে পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা পরে ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ বই আকারে প্রকাশ করা হয় ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামে । বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং নামকরণ করেছেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

এই বইয়ে শুধু কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তান সরকারের এক নায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের নানান চিত্র। ফুটে উঠেছে, দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন,ত্যাগ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের অজানা কাহিনী বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশ করছে।

আজ প্রকাশিত হলো- পর্ব-২২

ফরিদপুর জেলে এসে একলা পড়লাম । রাজবন্দিরা আছে । তাদের আলাদা জায়গায় রাখা হয়েছে। আর আমাকে রাখা হয়েছে একলা এক জায়গায় । হাসপাতালের একটা রুম ছেড়ে দিল, সেখানেই থাকলাম। প্রথমে হাসপাতাল থেকে খাবার দিত, পরে অন্য নিরাপত্তা বন্দিরা চার পাঁচজন এক জায়গায় থাকত, তারা নিজেদের পাক দেখাশোনা করত। আমাকে পরে সেখান থেকে খাবার আনাইয়া দেওয়া হতো। আমাকে ফরিদপুর জেলায় আনার পরে কাজ দেওয়া হলো, সুতা কাটা, কারণ এখন আর আমি রাজবন্দি নই, কয়েদি । সুতা কাটতে হতো। আর কয়েদির কাপড় পরতে হতো তিন মাস খেটে ফেললাম, আমারও সাজা খাটা হয়ে গেল। আবার রাজনৈতিক বন্দি হয়ে গেলাম।

কিছুদিন পরে খবর পেলাম আমি আপীলে খালাস হয়ে গেছি। সাজাও খাটা হয়ে গেছে, আবার আপীলেও খালাস হলাম। এত কথা লেখা দরকার হতো না। একই জেলে আরও রাজবন্দি আছে, তারা এক ঘরে থাকে, তাদের সামনেই পাক হয় । আর আমাকে সেই একই জেলে একাকী থাকতে হচ্ছে। দোষ কি জানি না জেলের আইন ভঙ্গ করি নাই, তবুও একাকী থাকতেহচ্ছে। তবে মাসে শুধু একবার গোপালগঞ্জ যেতে হয় ফরিদপুর থেকে। স্টিমার, নৌকা, গাড়িতে বেশ একটু খোলা বাতাস খাইতাম । যদিও কথা বলা নিষেধ, তবু আস্সালামুআলাইকুম তো নিষেধ না । আমাকে কিছু কিছু মানুষ চিনতো। তাই সকল জায়গায়ই কিছু চেনাশোনা মানুষ পাওয়া যেতো, আস্সালামুআলাইকুম করেই শেষ করতাম, তা না হলে সিপাহিদের চাকরি যাবে। কারণ আইবি কর্মচারীও আছে। একবার আমাকে কে যেন মিষ্টি দিয়েছিল মাদারীপুর স্টেশনে। সেই মিষ্টি কেন আমি খেলাম তাতে সিপাহিদের কৈফিয়ত দিতে দিতে জান সারা হয়ে গেছে। একজন নাকি সাসপেন্ড হতে যাচ্ছিল, হাত পাও ধরে বেঁচে গেছে তাই ওদের জন্য কারও সাথে আলাপও করতাম না। যদি কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করত বলতাম, ‘আমি কয়েদি, কথা বলা নিষেধ’। আমার জন্য ওদের ক্ষতি হবে কেন!

‘আইন দফা’—জেলে একটা ‘আইন দফা’ ছিল। এইটাই হলো সকলের চেয়ে কষ্টকর দফা । একটু মেজাজ দেখানো কয়েদি হলেই, সাজা দেওয়ার জন্য আইন দফা পাশ করা হতো। এদের গরুর মতো ঘানিতে ঘুরতে হতো। আর একটা পরিমাণ ঠিক ছিল, সেই পরিমাণ তেল ভেঙে বের করতে হতো। পিছনে আবার পাহারা থাকত, যদি আস্তে হাঁটতো অমনি পিটান। এটা ইংরেজ আমলেই বেশি ছিল, তবে পাকিস্তান হওয়ার পরে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চলে । সেন্ট্রাল জেলে এটা বন্ধ হয়ে যায় ১৯৪৯ সালে; তবে জেলা ও সাবজেলে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত চলে। শক্তিশালী লোকগুলি ঘানি টেনে এক বছরের ভিতর এত দুর্বল হয়ে পড়তো যে সে কথা কি বলব!

সূত্র: কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ৪১-৪২, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

পড়ুন আগের পর্ব :

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২১

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-২০

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৯
কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৭

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৬

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-১১

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী,এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ