32 C
আবহাওয়া
৫:১০ অপরাহ্ণ - আগস্ট ১০, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৯

আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৯


বিএনএ, ঢাকা: আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ থেকে যুক্ত হলো নতুন বাংলা বর্ষ ১৪২৯। বাংলার চিরায়ত উৎসব চৈত্র সংক্রান্তি ছিল গতকাল। জীর্ণ পুরোনো সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এভাবে বিদায়ী সূর্যের কাছে এ আহ্বান জানায় বাঙালি।

পহেলা বৈশাখ আমাদের সব সংকীর্ণতা ও কুপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবনব্যবস্থা গড়তে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের মনের ভেতরের সব ক্লেদ ও জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়। অন্যদিকে পহেলা বৈশাখ বাঙালির একটি সর্বজনীন লোক-উৎসব। এদিন আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্যাপিত হয় নববর্ষ।

পরপর দুই বছর করোনা মহামারির কারণে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সীমিত কিংবা ঘরোয়া পরিবেশে হলেও এবার নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি বরণ করবে নতুন বছরকে।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে। তিনি বলেছেন, বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জাতীয় জীবনে পরম আনন্দের দিন। আনন্দঘন এ দিনে তিনি দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বাংলা নবর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এদিনে চির নতুনের বার্তা নিয়ে আমাদের জীবনে বেজে উঠে বৈশাখের আগমনী গান। দুঃখ, জরা, ব্যর্থতা ও মলিনতাকে ভুলে সবাই জেগে ওঠে মহানন্দে। বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রধান অঙ্গ পয়লা বৈশাখ।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে গতকাল (১৩ এপ্রিল) শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলেন, ‘জীবনের এই পথ, কে বলিতে পারে/বাকি আছে কত/…ক্ষমা করো আজিকার মতো পুরাতন বরষের সাথে/পুরাতন অপরাধ যত।’

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা ১৪২৯ বঙ্গাব্দের শুভ মুহূর্তে বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্নাত হয়ে সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, পারস্পরিক সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আসুন বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি। যেখানে বৈষম্য থাকবে না, মানুষে মানুষে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ, থাকবে না ধর্মে-ধর্মে কোনো বিভেদ।

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে আসায় সংক্রমণ এড়ানোর বিধি-নিষেধের বেড়াজাল বিলুপ্ত হওয়ায় স্বাভাবিক মঙ্গল শোভাযাত্রার পথও খুলেছে। ফলে আজ বৃহস্পতিবার ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানাতে আগের মতো সকাল ৯টায়ই শুরু হবে শোভাযাত্রা। শুরু হবে টিএসসি থেকে, তবে এবার শাহবাগের দিকে না এগিয়ে যাবে নীলক্ষেতের দিকে। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলের কাজ চলায় শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত সড়ক সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে বলে শোভাযাত্রার গতিপথে এই পরিবর্তন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন।

নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে রামনা বটমূলের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন। এবার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীদের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পীরাও আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন। প্রতি বছর ১২৫ জন শিল্পী আয়োজনে অংশগ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে এবার ১০০ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন।

এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে। শেষ হবে ৮টা ৩০ মিনিটে। অনুষ্ঠানস্থলে যাতায়াতে এবার গেটের সংখ্যা আটটি। তার মধ্যে প্রবেশপথ তিনটি হলো অরুণোদয়, রমনা রেস্তোরাঁ, অস্তাচল। বের হওয়ার পথ দুটি- বৈশাখী ও উত্তরায়ণ। একই সঙ্গে প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ তিনটি- শ্যামলিমা, স্টার গেট এবং নতুন গেট।

আগত দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে জরুরি চিকিৎসা সেবা, নারী/ সিনিয়র সিটিজেন/ শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার। রয়েছে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেবা। তবে রমজান মাস হওয়ায় এবার থাকছে না কোনো খাবারের দোকান।

বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য রমনাসহ পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আশপাশ এলাকায় ডিএমপির ডগ স্কোয়াড ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট সক্রিয় রয়েছে।

এবারের শোভাযাত্রার জন্য টেপা পুতুল, পাখাওয়ালা মাছ, ঘোড়া ও পাখির প্রতিকৃতি প্রাধান্য পেয়েছে। এর বাইরেও শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষের হাতে থাকবে বিভিন্ন রকমের পুতুল, মুখোশ, সরাচিত্র ইত্যাদি।

মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষে চারুকলার জয়নুল আর্টস গ্যালারিতে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হয়েছে। গ্যালারির বাইরে বারান্দায় শিল্পীরা বিভিন্ন ছবি-সরা-মুখোশ আঁকছে। সেসব বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন কারু শিল্পের জিনিসও বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করছেন শিল্পীরা।

চারুকলার বাইরের পুরো প্রাচীরে বাঙালির লোকজ সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভেতরে বাচ্চাদের স্কুলটির বাইরের দেয়াল জুড়ে নকশিকাঁথার লোকজ সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

বর্ষবরণের দিনে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা থাকবে কঠোর। রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা থাকবে জোরালো। বেলা দুইটার মধ্যে বর্ষবরণের সমস্ত আয়োজন শেষ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও সন্নিহিত এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বিভিন্ন পয়েন্টে কড়া নিরাপত্তা থাকবে।

পুলিশের পোশাকে এবং সাদা পোশাকে নিরাপত্তকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ডগস্কয়াড এবং বোমা ডিসপোজাল টিম থাকবে। পুরো ভেন্যু সিসিটিভি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ