22 C
আবহাওয়া
১০:১৮ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হালচাল: পঞ্চগড়-১

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হালচাল: পঞ্চগড়-১


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী হালচাল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। আজ থাকছে পঞ্চগড়-১ আসনের হালচাল।

রাজনগড়, মিরগড়, ভিতরগড়, দেবেনগড় ও হোসেনগড় নামের পাঁচটি গড়ের সমন্বয়ে গঠিত পঞ্চগড় জেলা। এ জেলার তিনদিকেই ১৮৩ মাইল বেষ্টিত বাংলাদেশ-ভারতীয় সীমান্ত অঞ্চল। এ জেলার উত্তরে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুঁড়ি জেলা, উত্তর পূর্ব ও পূর্বে জলপাইগুঁড়ি ও কুচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশের নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতের পুর্নিয়া ও উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্বে ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলা অবস্থিত।

পঞ্চগড় -১ সংসদীয় আসনটি জাতীয় সংসদের ১ নম্বর আসন। এই সংসদীয় আসনটি পঞ্চগড় সদর উপজেলা, তেঁতুলিয়া উপজেলা ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত।

১৯৭৩ সালে ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-১ নামে পরিচিত ছিল। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩০ হাজার ২০ জন। এর মধ্যে ভোট প্রদান করেন ৭৫ হাজার ৬শত ৫৩ জন। আওয়ামী লীগের আব্দুর রউফ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ন্যাপ ভাসানীর মশিউর রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৮ হাজার ৮শত ৭০ ভোট।

১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনটি দিনাজপুর-১ নামে পরিচিত ছিল। ১লাখ ৩৫ হাজার ৪ জন ভোটারের মধ্যে ৬৭ হাজার ৬শত ১৯ জন ভোট প্রদান করেন। বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ৭ শত ৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জমির উদ্দিন প্রধান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৪ হাজার ২ শত ৪৫ ভোট।

১৯৮৪ সালের আগে পঞ্চগড় ছিল বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার একটি মহকুমা। দিনাজপুরকে ভেঙ্গে তিনটি জেলা করা হয়। এগুলো হচ্ছে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়।

YouTube player

১৯৮৬ সালের ৭ মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন এ আসনটির নামকরণ করেন পঞ্চগড়-১সংসদীয় আসন নামে। নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিরাজুল্ ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ১ শত ৭২ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী নাছির উদ্দিন আহাম্মদ। দাঁড়িপালা প্রতীকে তিনি পান ১৭ হাজার ৬ শত ৯৬ ভোট।

১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ জাতীয় সংসদের চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ প্রধান বিরোধীদল গুলো অংশ নেয়নি। জাতীয় পার্টি, ফ্রিডম পার্টিসহ কিছু অখ্যাত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। জাতীয় পার্টির আব্দুল কুদ্দুস বিজয়ী হন।

হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সরকারের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখার আলোকে দেশে প্রথমবারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেরুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সময়ে পঞ্চগড়- ১ সংসদীয় আসনে ভোটার ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ১ শত ৮১ জন।
নির্বাচনে বিএনপির মীর্জা গোলাম হাফিজ বিজয়ী হন।ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৬ শত ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সিরাজুল ইসলাম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ৬ শত ৪ ভোট।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটার ছিল ২ লাখ ৪ শত ৫৭ জন । নির্বাচনে বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৭ হাজার ৪ শত ৩৩ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ১২ ভোট।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ২ লাখ ৪০ হাজার ৭৩ জন। বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার দ্বিতীয়বার বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮১ হাজার ৭ শত ৮১ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম সুজন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭০ হাজার ১ শত ৬৪ ভোট।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ২ লাখ ৯১ হাজার ৯৫ জন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাজাহারুল হক প্রধান বিজয়ী হন । তিনি পান ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫ শত ৫০ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তিনি পান ১ লাখ ৭ হাজার ৭ শত ২৫ ভোট।

২০১৪ সালে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৮ হাজার ৯ শত ৫৯ জন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল নাজমুল হক প্রধান প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মশাল প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ১ শত ৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আবু সালেক। নাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ১ শত ৫৫ ভোট। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী অংশ নেয়নি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ৭৯ হাজার ২ শত ৭ জন। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাজারুল হক প্রধান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩ শত ৮৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনি পান ১ লাখ ৩২ হাজার ৫ শত ৩৯ ভোট।

নির্বাচনে আরও প্রতিদ্বন্দ্বী করেন লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আবু সালেক। হুক্কা প্রতীকে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির আল রাশেদ প্রধান। হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ আব্দুলাহ। গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির সুমন রানা। আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির হাবিবুর রহমান।

কারচুপির অভিযোগে বিএনপির নেতৃতাধীন জাতীয় ঐক্যজাট এই সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ১৯৮৮ সালের চতুথ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পঞ্চগড় -১ আসনে বিজয়ী হয়।

১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের ৬ষ্ট ও সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড় ১ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। ২০১৪ সালে মহাজোটের শরিক হিসেবে জাসদ প্রথমবার এ আসনে বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। সব মিলিয়ে বলা যায়, পঞ্চগড় ১ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং সব দলের অংশগ্রহণমুলক হলে কে হবেন পঞ্চগড়-১ সংসদীয় আসনের জনপ্রতিনিধি? এর উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল পর্যন্ত।

বিএনএনিউজ২৪ডটকম 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ