বিএনএ ডেস্ক:দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সরকারি সংগ্রহ বাড়াতে ভারত থেকে সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) পর্যায়ে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এতে ব্যয় হবে ৫৫৪ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা।
গত ১০ মার্চ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি জি টু জি ভিত্তিতে ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়।
সূত্র জানায়, উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনসাধারণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। কৃষকদের খাদ্য উদপাদনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতেও সচেষ্ট সরকার। এ লক্ষ্যে প্রতি বোরো ও আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল কেনা হয়ে থাকে। কিন্তু গত বোরো (২০২০) মৌসুমে সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪.৪৯ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
অন্যদিকে, চলতি আমন সংগ্রহ মৌসুমে ২.০৭ লাখ মেট্রিক টন ধান এবং ৬.৫০ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি মার্চ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ৭০ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন চাল ও ১১ হাজার ৯৯৬ মেট্রিক টন ধান সংগৃহীত হয়েছে। তাছাড়া, ঘন ঘন বন্যা, অতি বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় আমফান ও করোনা মহামারির কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হওয়ায় বাজারে ধান ও চালের দাম বাড়ছে।
এ অবস্থায় সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ নিরাপত্তা মজুত সুসংসহত করার স্বার্থে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পাশাপাশি জি টু জি পদ্ধতিতে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ মার্চ তারিখে দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুসারে ৫ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৯৮ হাজার মেট্রিক টন গম মজুত আছে।
দেশের সরকারি মজুত বাড়াতে এবং সরকারি খাদ্য বিতরণ স্বাভাবিক রাখতে আমদানির ক্ষেত্রে একাধিক উৎস থাকলে দ্রুত খাদ্যশস্য আমদানি করা সহজ হয়। এ বিবেচনায় ভারতের পাঞ্জাব স্টেট সিভিল সাপ্লাই করপোরেশন লিমিটেডের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনারের মাধ্যমে সংস্থাটির প্রতিনিধিদলকে ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ও মার্চ বাংলাদেশের জি টু জি পদ্ধতিতে ক্রয়বিষয়ক নেগোসিয়েশন কমিটির সভা হয়। সভায় জি টু জি পদ্ধতিতে চাল আমদানির চুক্তিনামার শর্ত এবং দাম নিয়ে বিশদ আলোচনা ও নেগোসিয়েশন হয়। আলোচনা ও নেগোসিয়েশন শেষে ভারত থেকে সিআইএফ-এলও (কস্ট, ইন্স্যুরেন্স, ফ্রেইট-লাইনার আউট) টার্মে ১ লাখ মেট্রিক টন এবং সিপিটি (ক্যারেজ পেইড টু) টার্মে ৫০ হাজার মেট্রিক নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি হয়।
সূত্র জানায়, সমুদ্র পথে আনতে প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪৪০.৫০ মার্কিন ডলার, যা বাজারদর যাচাই কমিটির প্রস্তাবিত দামের চেয়ে ১৪.১৭ মার্কিন ডলার বেশি। রেলপথে আনতে প্রতি মেট্রিক টন চালের প্রাক্কলিত গড় দাম ৪২৬.৫২ মার্কিন ডলার, যা বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সূত্র জানায়, বর্তমান জরুরি প্রয়োজন বিবেচনায় ভারত থেকে সমুদ্র পথে ৪৪০.৫০ মার্কিন ডলার দরে ১ লাখ মেট্রিক টন এবং রেল পথে ৪২৭ মার্কিন ডলার দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৫৪ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, যা পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬ (২) এ উল্লেখ করা দামসীমার ঊর্ধ্বে হওয়ায় ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।