19 C
আবহাওয়া
১:০৮ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৬১ (চাঁদপুর-২)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২৬১ (চাঁদপুর-২)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে চাঁদপুর-২ আসনের হালচাল।

চাঁদপুর-২ আসন

চাঁদপুর-২ সংসদীয় আসনটি মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিন উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৬১ তম আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে চাঁদপুর-২ ও ৩ আসনকে পুনঃসংস্কার করে মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা চাঁদপুর- ২ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর আগে ১৯৭৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মতলব উত্তর ছিল চাঁদপুর-২ আসনে।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নুরুল হুদা বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৪ হাজার ৫০ জন। নির্বাচনে বিএনপির নুরুল হুদা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ৩ শত ১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৮ শত ১ ভোট ।

ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নুরুল হুদাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির নুরুল হুদা কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১২ হাজার ২ শত ৯৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৫ হাজার ৩ শত ৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নুরুল হুদা। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৪ হাজার ৯৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির নুরুল হুদা বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৬ শত ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩০ হাজার ৯ শত ১ জন। নির্বাচনে বিএনপির নুরুল হুদা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ২ শত ৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৫ শত ১৬ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল মো. রফিকুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭১ হাজার ১ শত ৩৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৬ হাজার ২ শত ১০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল মো: রফিকুল ইসলাম বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৩ হাজার ৭ শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নুরুল হুদা। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৮ শত ২৫ ভোট।

দশম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নুরুল আমিন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩ শত ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৬ শত ৮০ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের নুরুল আমিন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দীন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির এমরান হোসেন মিয়া, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আফছার উদ্দীন, হারিকেন প্রতীকে মুসলীম লীগের নুরুল আমিন লিটন এবং মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্য জোটের মনির হোসেন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল আমিন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩ লাখ ১ হাজার ৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মো: জালাল উদ্দীন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ১০ হাজার ২ শত ৭৭ ভোট।

কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, নবম , দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর চাঁদপুর-২ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, চাঁদপুর-২ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৭.২৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৯৪%, বিএনপি ৪৩.৯১%, জাতীয় পাটি ১৪.৬৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৫০% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৯৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬৭.১৩%, বিএনপি ২১.৪৬% জাতীয় পাটি ৯.১৬%, জামায়াত ইসলামী ০.৯৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.২৯% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.৭৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.৫৯%, ৪ দলীয় জোট ৫৯.৭৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৬৭% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৩৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৫.৩৮%, ৪ দলীয় জোট ৩৮.৯৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৬৭% ভোট পায়।

চাঁদপুর-২ (মতলব) : আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল আমিন রুহুল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন বর্তমান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, তাঁর বড় ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী দীপু, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা শেফালী আক্তার বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালাল উদ্দিন। তিনি ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মনোনয়ন দৌড়ে তিনি এগিয়ে আছেন। এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস শুক্কুর পাটোয়ারী এবং সাবেক সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী ও তিনবারের সংসদ সদস্য নুরুল হুদার পুত্র তানভীর হুদা, চাঁদপুর জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি, মতলব উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শরীফ মাহমুদ ফেরদৌস শাহীন, ব্যারিস্টার ওবায়েদুর রহমান টিপু।

জাতীয় পাটি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চাঁদপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এমরান হোসেন মিয়া।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, চাঁদপুর ২ (মতলব) আসনটি কোন রাজনৈতিক দলের একক ঘাঁটি নয়। ১৯৭৩ সালের প্রথম থেকে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পাচঁবার, বিএনপি চারবার জাতীয় পার্টি দুইবার বিজয়ী হন।

অতীতে এই আসন থেকে যে দলের প্রতিনিধি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, কাকতালীয়ভাবে সেই দলই সরকার গঠন করেছে। প্রায় সব সরকারের আমলে এই আসন মন্ত্রী পেয়েছে। তাই উন্নয়নও হয়েছে ব্যাপক। এই আসনে আওয়ামী লীগ ব্যাপক উন্নয়ন করলেও দলীয় কোন্দলে উন্নয়ন চাপা পড়ে যাচ্ছে। সাংগঠনিক দিক থেকে আওয়ামী লীগ বেশ মজবুত। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাশি নেতারা নিজেরা এলাকা ভিত্তিক গ্রুপ উপগ্রুপ গড়ে তুলেছেন। যা নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এক সময় বেশ শক্ত ছিল। গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতা বলয়ের বাহিরে থাকায় এখন সাংগঠনিক অবস্থা বেশ নাজুক, তার ওপর রয়েছে চরম গ্রুপিং। তবে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে প্রচুর নিরব ভোট রয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৬১তম সংসদীয় আসন (চাঁদপুর-২) আসনটিতে কোন দল জিতবে তা নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নের ওপর।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ